সংখ্যাটা দেখে ফুটবলপ্রেমীরা খুশিই হতে পারেন। ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাফুফের নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সংখ্যা ২১। অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর যারা জিতবেন তারাই চার বছরের জন্য চেয়ারে বসবেন। ২১টি পদ হলেও এবার মনোনয়ন কিনেছেন সব মিলিয়ে ৬২ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৪, সিনিয়র সহসভাপতি ৩, সভাপতি ১২ ও সদস্য পদে মনোনয়ন কিনেছেন ৪৩ জন। এ সংখ্যা আশা জাগানোর মতো। দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেই বলে তারা ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে চান। তবে অপেক্ষা করতে হবে শেষ পর্যন্ত কতজন প্রার্থী হবেন। আজ ও আগামীকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। প্রত্যাহার করা যাবে ১৯-২০ অক্টোবর। মূলত সেদিনই নিশ্চিত হবে ভোটে প্রার্থী হবেন কতজন।
মনোনয়নপত্র কেনার ছড়াছড়ি দেখে এক সাবেক ফুটবলার মন্তব্য করেছেন, ‘সালাউদ্দিন ভাই নির্বাচনে নেই। তাই ফুটবলে গণতন্ত্রের বাতাস বইছে। এখনই তো ফুটবল সেবা করার উত্তম সময়।’ তিনি যে রসিকতা করে এ কথা বলেছেন তা প্রথমে বোঝা যায়নি। কেননা কিছুক্ষণ পরেই বললেন, ‘আরে ভাই ফুটবল উন্নয়ন করা এত সহজ? এতজন মনোনয়নপত্র কিনেছেন তাদের ক’জনার ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। চেনা দরকার নেই, অচেনারাও ফুটবল উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। কিন্তু মনোনয়ন যারা কিনেছেন হাতেগোনা ৩/৪ জন ছাড়া সেই সামর্থ্য তো নেই। এত মনোনয়ন চমক হতে পারে। তবে ফুটবলের নির্বাচন ঘিরে তা হাসিতেও পরিণত হয়েছে।’
যাক কারা মনোনয়নপত্র জমা বা প্রত্যাহার করবেন তা সময় বলে দেবে। তবে কয়েকজনের নাম বলা যায় তারা প্রার্থিতা পদ প্রত্যাহার করবেন না। সভাপতি পদে তো চারজন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এদের মধ্যে সাবেক ফুটবলার তাবিথ আউয়াল নির্বাচন করবেন তা শতভাগ নিশ্চিত। অনেকে তাবিথের বিজয় নিশ্চিত মনে করেন। অর্থাৎ ফুটবল ফেডারেশনে সভাপতি হিসেবে তৃতীয় ফুটবলারের দেখা মেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগের হাফিজউদ্দিন আহমদই প্রথম ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সভাপতি ছিলেন। তার আগে সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। আর কাজী সালাউদ্দিন হচ্ছেন দ্বিতীয় ও ফুটবলার হিসেবে প্রথম নির্বাচিত সভাপতি। তাবিথ আউয়াল এক সময়ে জায়ান্ট কিলার খ্যাত আরামবাগের তারকা ফুটবলার ছিলেন। দেখা যাক সভাপতি পদে তৃতীয় ফুটবলারের দেখা মেলে কি না।
এবারের নির্বাচনে আলোচিত ও সমালোচিত প্রার্থীর নাম তরফদার রুহুল আমিন। ২০২০ সালে বাফুফের সভাপতি প্রার্থী হয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রাণ প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি নির্বাচিত হলে স্মার্ট ফুটবল অঙ্গন গড়ে তুলব।’ অথচ এমন প্রচারের পরও হঠাৎ তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শুধু তাই নয়, পেশাদার লিগে খেলা তার দল সাইফ স্পোটিংকেও ফুটবল থেকে সরিয়ে নেন। ঘোষণাও দিয়েছিলেন আর কখনো ফুটবলের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবেন না।
কাজী সালাউদ্দিন নির্বাচন না করার পরই তরফদার ক্রীড়াঙ্গনে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বুঝায় যাচ্ছিল বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি হতেই এত তৎপরতা। বড় এক অনুষ্ঠান করে লোকজন নিয়ে ঘোষণা দেন ধ্বংসের হাত থেকে ফুটবলকে বাঁচাতে বাফুফে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার।
তাবিথ আউয়াল সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পরই তরফদার একেবারে আড়ালে চলে যান। মনে হচ্ছিল এবারও তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন না। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। শনিবার লোক মারফত তিনি সিনিয়র সহসভাপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন। শোনা যাচ্ছিল এই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে বিশেষ মহলে লবিং করেন। এতে লাভ হয়নি। কারণ তার আগেই একই পদে মনোনয়ন কিনেছেন ইমরুল হাসান। যিনি এখন ফুটবলে সবচেয়ে সফল সংগঠক হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। ফুটবল উন্নয়নে ইমরুলের ভূমিকা কী তা ফুটবলপ্রেমীরা ভালোভাবেই জানেন। তরফদার নিজেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও সিনিয়র সহসভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কিনতেই পারেন। এটা তার অধিকার। কিন্তু যে লোক বারবার সুর বদলান তাকে দিয়ে ফুটবল উন্নয়নে কী আশা করা যায়?