সাইবার অপরাধীরা প্রায়ই ব্যবহারকারীকে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইনস্টল করতে প্রলুব্ধ করে। এই ধরনের সফটওয়্যার ডাউনলোড করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী অনলাইন সুরক্ষার বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য ও ফাইল চুরি হতে পারে। তাই হ্যাকিং, ম্যালওয়্যার বা অন্যান্য সাইবার হামলা প্রতিরোধে নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশের বাজারে ক্যাসপারস্কি, বিটডিফেন্ডারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার সহজলভ্য।
অ্যান্টিভাইরাস কীভাবে কাজ করে?
অ্যান্টিভাইরাস এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার যা কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসকে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে সুরক্ষিত রাখে। ম্যালওয়্যার শনাক্ত ও মুছে ফেলার কাজটি মূলত অ্যান্টিভাইরাস করে থাকে। এটি প্রথমে ডিভাইস স্ক্যান করে এবং ক্ষতিকর প্রোগ্রামগুলোকে নিজস্ব তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সিগনেচার বেজড ডিটেকশন। যদি কোনো প্রোগ্রাম অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক আচরণ করে, তখন অ্যান্টিভাইরাস সেটিকে বিহেভিয়ার বেজড ডিটেকশনের মাধ্যমে শনাক্ত করে। দুই প্রক্রিয়া মিলিয়েই অ্যান্টিভাইরাস ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখে।
সঠিক অ্যান্টিভাইরাস নির্বাচন জরুরি
কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসকে অনলাইন ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিভাইরাস নির্বাচন করার সময় রিয়েল-টাইম স্ক্যান, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার ফিচার ও শক্তিশালী ফায়ারওয়াল আছে কিনা, তা যাচাই করা প্রয়োজন। বাজারে অনেক ধরনের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার রয়েছে, যেমন ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও টোটাল সিকিউরিটি। এগুলোর মধ্যে কিছুটা বৈচিত্র্য থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মূল কাজ একই। কোথায় ব্যবহার করা হবে এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেমন, তার ওপর নির্ভর করে অ্যান্টিভাইরাসের দাম নির্ধারিত হয়। অনেক অ্যান্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে ফ্রি ট্রায়াল সুবিধা থাকে, যা ব্যবহারকারীরা কিনতে আগ্রহী হওয়ার আগে যাচাই করে নিতে পারেন।
অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত হালনাগাদ করা প্রয়োজন
নতুন নতুন সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে, ফলে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারও সময়মতো হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদ সংস্করণগুলোতে নতুন ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস শনাক্ত করার সুবিধা যুক্ত থাকে। তাই অ্যান্টিভাইরাসের সেটিংসে গিয়ে স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ চালু রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
নিয়মিত স্ক্যান ও রিয়েল-টাইম প্রটেকশন
কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার থেকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিন কুইক স্ক্যান করা উচিত এবং সপ্তাহে অন্তত একবার পুরো সিস্টেম স্ক্যান করা প্রয়োজন। এ ছাড়া, রিয়েল-টাইম প্রটেকশন চালু রাখলে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ক্রমাগত ডিভাইসটি সুরক্ষিত রাখে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের ড্যাশবোর্ড থেকে সহজেই এই সুবিধা চালু রাখা যায়।
বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল ও অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা
বেশিরভাগ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারেই বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল, অ্যান্টি-ফিশিং টুল ও ভিপিএন সুবিধা থাকে, যা সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষা দেয়। ইউএসবি ড্রাইভ বা এক্সটারনাল হার্ডডিস্কের মতো যেকোনো ডিভাইস কম্পিউটারে যুক্ত করলে প্রথমেই তা অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করা জরুরি। এসব ডিভাইসের মাধ্যমে প্রায়ই ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়ে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবায়ন করা জরুরি
অ্যান্টিভাইরাসের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেটি নবায়ন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সফটওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করবে না এবং ডিভাইস সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে। তাই লাইসেন্সের নম্বর বা কি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে রাখা বাঞ্ছনীয়।
সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার ও নিয়মিত হালনাগাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল