২২ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:১৭

নানা দাবিতে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন বেরোবি শিক্ষকরা

রংপুর প্রতিনিধি:

নানা দাবিতে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন বেরোবি শিক্ষকরা

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিতি, নিয়োগ ও বাছাই বোর্ড,  সিন্ডিকেট সভাসহ গুরুত্বপূর্ণ সভা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।

ইতিমধ্যে শিক্ষক সমিতি তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে প্রদান করেছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজি মাযহারুল আনোয়ার স্মারকলিপি দেবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

লিখিত অভিযোগে শিক্ষক সমিতি অভিযোগ করেছে, উপাচার্য পদে যোগদানের পর থেকে গত প্রায় তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকছেন এবং রেজিস্ট্রার ও প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা হয়েও আবু হেনা মোস্তফা কামাল দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকছেন। তার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেকবার শিরোনাম হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছানোর ফলে শিক্ষক সমিতি গত ৬ অক্টোবর সমিতির সভায় উপস্থিত সদস্যরা উপাচার্য ও রেজিষ্টারের দীর্ঘ অনুপস্থিতির বিষয়টি তাদের জানানোর জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে উপাচার্য শিক্ষক সমিতির সাথে সাক্ষাৎ করতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। 

পরবর্তীতে আবারো শিক্ষক সমিতি গত ৪ নভেম্বর তারিখে সভা করে দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই আলোকে বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষক সমিতি দাবি দাওয়া সম্বলিত চিঠি উপাচার্য অনুপস্থিত থাকার কারণে তার পিএস আমিনুর রহমানের কাছে প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রায় তিন বছর হতে যাচ্ছে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকছেন। তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। সেখানে তার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পর্যবেক্ষন সংস্থা জানপপের কাজ করেন। তার ইচ্ছা মতো মাসে কয়েকদিন ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। গত বছর ২০১৮ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১শ' দিনের মতো তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন আর ২৬৫দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি হয় সকালে না হয় দুপুরের বিমানে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে আসেন আবার বিকেলের বিমানে ঢাকায় চলে যান। গত বছর তিনি সর্বোচ্চ ১৫ রাত কাটিয়েছেন ক্যাম্পাসে তার নিজস্ব বাস ভবনে। অথচ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কর্তৃক তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দান করেছিলেন তার প্রধান শর্ত ছিলো যে তাকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু তিনি নিয়োগের প্রধান শর্ত পালন করছেন না। এ ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজো অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল সভা সেখানে অনুষ্ঠান করেন। 

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সর্বোচ্চ  কর্মকর্তা হিসেবে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালও ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা না করে ঢাকায় করার কারণে সিন্ডিকেটের দুই সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক গাজি মাযহারুল আনোয়ার ও অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম বিগত বেশ কয়েকটি সভা বয়কট করেছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অচিরেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছে শিক্ষক সমিতি- বিষয়টি একাধিক শিক্ষক নেতা নিশ্চিত করলেও তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজি মাযহারুল আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা দাবিদাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে বৃহস্পতিবার দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু উনি ক্যাম্পাসে না থাকায় তার পিএসকে দিয়ে এসেছি। পরবর্তী করণীয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

সিন্ডিকেট সভা বয়কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা উপাচার্যকে বলেছি সভা ক্যাম্পাসে করতে। উনি রাজি না হওয়ায় আমরা সভায় যাচ্ছি না।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর