অন্তর্বতীকালীন সরকারের ঘোষিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ‘অপ্রতুল’ দাবি করে বাজেট বৃদ্ধিসহ চারটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সংসদ।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে সংগঠনটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার।
সংগঠনটির প্রস্তাবনাগুলো হলো - গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিশেষ বরাদ্দ প্রণয়ন করতে হবে; মোট বাজেটের ২০% ও জিডিপির ৫% শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দিতে হবে ; কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে; গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তরের লক্ষ্যে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আবু বাকের মজুমদার বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার তাদের প্রথম বাজেট পেশ করেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। গতবছরের তুলনায় শিক্ষা খাতে বাজেট ৭ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেলেও আমরা এই বরাদ্দকে যথেষ্ট মনে করছি না। ইউনেস্কো শিক্ষাখাতের জন্য যে আদর্শ বরাদ্দ সুপারিশ করে এটি তার অর্ধেকের চেয়েও কম। প্রস্তাবিত বাজেটটিকে শিক্ষাবান্ধব বাজেট বলা যাচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যেও শিক্ষা খাতে জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশের বরাদ্দ সর্বনিম্ন।
শিক্ষার চেয়ে অবকাঠামোকে গুরুত্ব দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মান উন্নয়ের চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়কেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের ৫৮ টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫ টি প্রকল্পই ভবন নির্মাণ কিংবা সৌন্দর্য বর্ধন কেন্দ্রিক। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, গবেষণা, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা কিংবা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য কোনো প্রকল্প বাজেটে দেখা যায় নি।
প্রাথমিকে বরাদ্দ হ্রাস পাওয়া নেতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হ্রাস করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি বছরের বরাদ্দ প্রস্তাবনায় ছিলো ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের জাতীয় শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। সেখানে বাজেট বৃদ্ধির বদলে হ্রাস পাওয়া খুবই নেতিবাচক বলে আমরা মনে করি।
কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে আবু বাকের মজুমদার বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা কারিগরি শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি ও গুরুত্বারোপের কথা বললেও সেখানেও উল্লেখযোগ্য কোনো ডেভেলপমেন্ট হয়নি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণকে জনশক্তিকে পরিণত করার জন্য ভোকেশনাল এডুকেশন কিংবা ট্রেনিংয়ে বরাদ্দের চেয়ে বৃত্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের দিকেই বেশি আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলতঃ সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা তৈরিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে আমরা মনে করি।
সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার ১০ মাস পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কিংবা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট সচেষ্ট থাকেনি, এখনও কোনো একটি ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকার ডজনখানেক কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করেনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম