সমন্বিত গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সভা চলাকালীন সময়ে গুচ্ছের পক্ষ-বিপক্ষের অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপাচার্যের সভাকক্ষে থাকা ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ সরিয়ে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার উপাচার্যের সভাকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ওই শিক্ষককে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কাদের।
একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি এবারে প্রথম দেখলাম। সভায় ওই শিক্ষক গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার পক্ষে মতামত দেয় এবং গুচ্ছে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে কেন প্রশ্ন তুলে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তার বাক বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গুচ্ছের পক্ষে থাকা কয়েকজন শিক্ষক জোরাজোরি করে বসাতে গেলে হাতাহাতি হয় এবং তাকে মারধর করে জোরপূর্বক বসিয়ে দেয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ তাদের শান্ত করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়।এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি মানসিকভাবে খুবই খারাপ আছি। এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। একাডেমিক সভায় আমি একটু ভিন্ন মত দিয়েছি বলেই এতজন শিক্ষকের মাঝে আমার গায়ে হাত তুলবে এটা মেনে নেওয়ার মত না। আমি এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো। প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ পর্যন্ত আইনি লড়াই করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে যা হয়েছে এবং ঘটেছে সকলের চোখের সামনে হয়েছে।
মারধোরের অভিযুক্ত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একে এম লুৎফর রহমান বলেন, এখানে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে খুব উত্তেজিত ছিলো। বসতে বলার পরও বসতে চাচ্ছিলো না। কয়েকজন তার ঘাড়ে চাপ দিয়ে বসিয়ে দিয়েছি। বিষয়টা মিটমাট করা হয়েছে। আমরাও দুঃখ প্রকাশ করেছি, সেও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, মারধরের এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। কাদের স্যার একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে গেছিলো। একাডেমিক কাউন্সিল কোনো সংসদ কিংবা টকশোর টেবিল না। একজন শিক্ষক হয়ে তিনি টেবিল থাপড়িয়ে কথা বলতে পারে না। পরবর্তীতে আমরা কয়েকজন গিয়ে তাকে বসিয়ে দিয়েছি শুধুই।
তবে এ ঘটনায় জড়িত একাধিক শিক্ষকের নাম আসলেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও অনেকে কথা বলতে রাজি হননি।
সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার বিষয়ে আইটি দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সিসিটিভির ফুটেজ ফুটেজ পাইনি। হয়তো কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য ফুটেজটি পাওয়া যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, যাই ঘটেছে তা শিক্ষকদের কাছ থেকে কখনই কাম্য নয় এবং শিক্ষকসুলভ আচরণও না। এই সভায় একজন সদস্য হিসেবে পক্ষে বিপক্ষে সবার কথা বলার অধিকার আছে। একাডেমিক সভায় আমাদের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটবে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। শিক্ষকদের এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়। এ ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত এবং মর্মাহত।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন