রোহিঙ্গা নাগরিককে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদপত্র দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়েই পাসপোর্ট করতে এসেছে রোহিঙ্গা নাগরিক। পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত অফিসার যাছাই-বাছাই করতে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিতেই রোহিঙ্গা নাগরিকের তথ্য বের হয়ে আসে। এরপর আটকও করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন কিভাবে চেয়ারম্যানের কাজ থেকে এসব সনদ এনেছেন, তখন যাছাই-বাছাই করা হয়নি কেন, সবমিলে একটা রহস্য শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
মোহাম্মদ আরমান (১৯)। রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছিল মনসুরাবাদের পাসপোর্ট অফিসে। আরমানের আচার-আচারণ দেখেই ধরা পড়েছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের হাতেই। সেই আরমানের শেষ রক্ষা হলো না আর। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকালে পাসপোর্ট অফিস থেকে আটককের পর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন আপোষ নেই। নানা মাধ্যমে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট করার চেষ্টা করেন। আমরা সচেতন রয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তবে ভোটার আইডি কার্ড-জন প্রতিনিধিদের দেয়া জাতীয়তা সনদপত্রসহ অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। এখানে যাবতীয় ডকুমেন্ট দিলেই কাজ করার সুযোগ হয়। তাছাড়া আটককৃত রোহিঙ্গা নাগরিককে পুলিশের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সন্দ্বীপ উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাশেম মোল্লা বলেন, রোহিঙ্গা কাউকে এ রকম কোন সনদ আমি দিইন। আমি একটু অসুস্থ। এই মুহূর্তেই বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এতে সঠিক তথ্য বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা আরো জানা গেছে, উনিশ (১৯) বছরের এই রোহিঙ্গা তরুণ আরমান সন্দ্বীপ উপজেলার হরিশপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ফয়সালের ছেলে সেজে পাসপোর্ট করতে এসেছিল। সেখান থেকে জন্মনিবন্ধন (নং ২০০২৬৯২.....৭০২), মায়ের জাতীয়তা সনদপত্র (নং ৭৮০৮...৪৬৫) ও জাতীয়তা সনদপত্রও দাখিল করেছেন। এসময় পাসপোর্ট অফিসের কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তি আঙুলের ছাপ নিতেই ধরা পড়ে আরমান। আরমান কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সালের রেজিস্ট্রেশন করা সৈয়দ আলমের ছেলে মোহাম্মদ আরমানের আঙুলের ছাপের সাথে মিলে যায়।
ডবলমুরিং থানার এসআই জামিল বলেন, মনছুরাবাদের পাসপোর্ট অফিসে একজন রোহিঙ্গাকে আটকের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। এরপর বিস্তারিত যাছাই-বাছাই করে এবং পাসপোর্ট অফিসের উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে থানায় নিয়ে এসেছি। তবে আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে আমার উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করেই যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন