২৬ জুন, ২০১৯ ১৯:১৭

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান প্রতিবন্ধী চাঁদের কনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান প্রতিবন্ধী চাঁদের কনা

চাঁদের কনা

দয়া বা আনুকূল্য নয়, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি চান মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদের কনা। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রবল মনোবলের কারণে উচ্চ ডিগ্রী অর্জনে তার সংগ্রামের কথাগুলো একান্তে বলতে চান সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের এ মেয়ে। গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে প্রথম বিভাগ পাওয়া এই প্রতিবন্ধী মেয়েটি আজ বুধবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন। তার একটাই চাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ।  

দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসা চাঁদের কনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও নানা কষ্টে আমি মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই নয়, ভাড় উত্তোলন থেকে শুরু করে টিভি-রেডিও’তে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা;  নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় করা ও কবিতা আবৃতি করা; ছবি আঁকা এবং কম্পিউটারে সকল কাজ আমার জানা আছে। মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার পর অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কেউই চাকরি দিতে চায়নি। আমার মতো প্রতিবন্ধীদের একমাত্র ভরসা জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শারীরিক এ প্রতিবন্ধী। আবার বললেন, ‘শুধু একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করে দেন। শারীরিক অক্ষমতা থাকার পরও আমার জীবন সংগ্রামগুলো বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বলতে চাই।’ 

প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত প্রতিবন্ধী চাঁদের কনার  হুইলচেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা ২০টির মতো প্লাকার্ড। গলায় ঝুলছে, ‘আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা চাই। তার সাথে দেখা করতে চাই।' ভিক্ষা চাইতে আসিনি, যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি চাই’-সহ নানা স্লোগান। 

চাঁদের কনার বাড়ী সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিয়াড়া গ্রামে। বাবা আব্দুল কাদের। ছোটবেলা থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে পায়ের কার্যক্ষমতা হারান তিনি। হাঁটতে হয় হাতের উপর ভর করে। হাতের উপর ভর করেই চলে তার লেখাপড়া। অদম্য ইচ্ছে শক্তির কারণেই এসএসসি, এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে। তিনি অনার্স পড়েছেন পঞ্চম তলায় তার ক্লাস হতো। অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন ৯টার দিকে। অথচ তিনি কলেজে যেতেন সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে তার দেড় ঘণ্টার মতো সময় লেগে যেতো। এর মধ্যে মাকে হারান তিনি। তার মা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। এরপর বাবা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। দিশেহারা হয়ে পড়েন চাঁদের কনা। ২০১৩ সালে মাস্টার্সে ভর্তি হন ঢাকা ইডেন কলেজে। খণ্ডকালীন চাকরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সামান্য বেতন। এরপর তিনি প্রথম বিভাগে গাহস্থ্য অর্থনীতিতে পাশ করেন। চাকরির জন্য বিভিন্ন দফতরে গেছেন। কিন্তু চাকরি নামের সোনার হরিণটি ধরা দেয়নি। তার চাওয়া যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি। 

এ বছরই তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন। সাক্ষাৎ চান প্রধানমন্ত্রীর।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর