পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের খুলনা জংশনে রেলের তেল চুরি, লোকোমাস্টার (চালক) পদ থেকে নিম্নতম পদে দায়িত্বে রেখে সিন্ডিকেট পরিচালনা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুলনা জংশন পাইলটে (লোড-আনলোড স্থান) প্রায় ৯৮ হাজার ৫৫০ লিটার এইচএসডি ডিজেল অতিরিক্ত ব্যবহার দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় ১২৬ হাজার লিটার তেল বিনষ্টসহ ইঞ্জিন ড্যামেজ হলেও চালক খোরশেদ আলমের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ‘সেরা ট্রেনচালক’ পুরস্কার প্রদান, ট্রেনচালক আবুল কালাম আজাদকে কম বেতন-ভাতা প্রদান করে হয়রানি ও মিথ্যা অভিযোগে তাকে শাস্তি প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট খুলনা-ঈশ্বরদী ট্রেনে (কেএন-ওয়ান আপ) ৩০টি ওয়াগনের মধ্যে ২৭টির ব্রেক অকার্যকর থাকে। এ বিষয়ে ট্রেনের চালক আবুল কালাম আজাদ পাওয়ার কন্ট্রোলারকে (পিএনএল পাকশী) অবহিত করেন। ট্রেনটি ছাড়তে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হলে চালক আবুল কালামের সঙ্গে সিন্ডিকেটে জড়িত গার্ড বিশ্বজিৎ কুমার ও রেলের নিরাপত্তা স্টাফ গৌতম কুমারের তর্কবিতর্ক হয়। এর আগেও আবুল কালাম তাদের সিন্ডিকেটের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গৌতম কুমার ওইদিন চেঙ্গুটিয়া স্টেশন পার হওয়ার পর চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ৩-৪টি সাদা বস্তা ফেলতে দেখেন বলে মিথ্যা অভিযোগ করেন। সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকলেও বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো-পাকশী) আশীষ কুমার মন্ডল ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর চালক আবুল কালামের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি চার বছর স্থগিত, এমএল গ্রেড-২ থেকে এএলএম-গ্রেড-১ পদাবনত, ১৩তম গ্রেড থেকে ১৬তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, ১২১ দিন সাময়িক বরখাস্ত, দিনে দুবার পাকশী অফিসে হাজিরা ও খুলনা থেকে পাবর্তীপুর বদলি করা হয়। এর বিরুদ্ধে আবুল কালাম প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আশীষ কুমার মন্ডলসহ সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় ওইদিন ১৬ লিটার জ্বালানি তেল সঞ্চয় দিলেও ৩০ লিটার তেল ঘাটতি দেখিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে রানিং ভাতা বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা কম দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে তদন্তের জন্য প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী লিখিত নির্দেশ দেন।
জানা যায়, লোকোমাস্টার কে এম হামিদুল্লাহকে এক ধাপ নিচে সাব লোকোমাস্টার দায়িত্ব দিয়ে চক্রটি ২০১৯-২০২১ পর্যন্ত সাড়ে ৯৮ হাজার লিটার তেল আত্মসাৎ করে। সাব লোকোমাস্টার দায়িত্বে থাকলে ট্রেন নিয়ে খুলনার বাইরে যেতে হয় না। তেল আত্মসাতের বিষয়ে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী আশীষ কুমার মন্ডলের কাছে অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকায় তিনি নিজেই সিন্ডিকেটে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আশীষ কুমার মন্ডল জানান, খুলনা জংশনে তেল আত্মসাৎ সিন্ডিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবুল কালামকে কম ভাতা প্রদানের বিষয়েও তাকে কেউ চিঠি দেয়নি।