বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আগেই এর প্রতিষেধক ও করোনা রোগী শনাক্তকরণের একটি পদ্ধতির কথা জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় ব্লাড প্লাজমার প্রয়োগ চালু জরুরি বলে মনে করছেন চবির এ শিক্ষক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, পরোক্ষ এন্টিবডি থেরাপি বা ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠা ব্যক্তির ব্লাড-প্লাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করলে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কারণ পূর্বে আক্রান্ত হতে নিরাময় হয়ে উঠা ব্যক্তির শরীরে এন্টি-কোভিড-১৯ এন্টিবডি উৎপন্ন হয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর উপর প্রয়োগ করা চীনের দুটি পাইলট স্টাডির ফলাফল প্রকাশ করেছে নামকরা বিভিন্ন গবেষণা সাময়িকী ও দৈনিক পত্রিকাগুলো। একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, উহান শহরের ডাক্তাররা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থেকে নিরাময়কারীর ব্লাড প্লাজমা (কনভালেসসেন্ট প্লাজমা) করোনাভাইরাসে মারাত্মক আক্রান্ত ১০ জন রোগীর উপর প্রয়োগ করে দেখলেন যে রোগীর ভাইরাসের লেভেল দ্রুত কমে গেছে এবং তিন দিনের মধ্যে রোগী ছোট-ছোট নি:শ্বাস ও বুকে ব্যথা থেকে অনেক উন্নতি হয়ে জ্বরও কমে এসেছে।
এছাড়াও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এ চিকিৎসার প্রস্ততি গ্রহণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এরকম আমেরিকা, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত ও পাকিস্তান এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, আমাদের দেশও করতে পারে। তাহলে আমরা কেন করছিনা? এটাতো জটিল কোন ট্রায়াল নয়। ব্লাড দেওয়ার মত একটা প্রক্রিয়া। সব দেশের ক্লিনিকেল ট্রায়াল হতে ফলাফল দেখে আমরা ট্রায়াল করবো। এটা না ভেবে এইচ১এন১, সার্স, ইবেলায় ব্লাড-প্লাজমার সফল ক্লিনিকেল ট্রায়াল থেকে অতীত অভিজ্ঞতা গ্রহণ এবং সম্প্রতিকালে করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষ রোগীর উপর চীনের ব্লাড-প্লাজমার পাইলট চিকিৎসার অভিজ্ঞতা নিয়েই আমাদের দেশে ব্লাড-প্লাজমার ক্লিনিকেল ট্রায়াল শুরু করা উচিত।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ব্লাড-প্লাজমা দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রুমন। গত ১২ এপ্রিল শরীরে করোনা ভাইরাস পজিটিভ দেখার পর সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগর গ্রামের ৩ তরুণ ১৪ এপ্রিল ভর্তি হন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ১৪ দিন দুইবার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসায় ২৯ এপ্রিল ছাড়পত্র দিলে বাড়ি ফিরে যান তিনি। সুস্থ হওয়ার খবর জানাতে ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রুমনকে ফোন করলে এ প্রস্তাব দিলে রাজিও হন তিনি। এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছে রুমন।
এ বিষয়ে ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের ঔষধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আমি মনে করি এ প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাময় করা সম্ভব। পাশ্ববর্তী কয়েকটি দেশ এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে খুব দ্রুত এটি প্রয়োগ করা সম্ভব। ভারতের তবলিগ জামাতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়াদের কয়েকজন সুস্থ হয়ে ব্লাড প্লাজমা দেন। এতে ভালো ফলাফল পেয়েছে ভারত।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল