স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে থাকতেও আঞ্জুমান-ই মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে সেই বৃদ্ধকে। দাফনের একদিন পর তার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যাতে তিনি তার নিজের ও সন্তানদের পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে ওই বৃদ্ধের। কিছুটা সুস্থ হলে স্থানীয় এক সাংবাদিক তার সাক্ষাৎকারটি ভিডিও করেন।
৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী উল্লেখ করে ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন তার নাম রিয়াজুল হক চৌধুরী, বাবার নাম মরহুম জিয়াউল হক চৌধুরী ও স্ত্রীর নাম শিরিন বেগম। সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর খাজাঞ্চি পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানান।
ছেলেদের নাম জানতে চাইলে বৃদ্ধ রিয়াজুল হক চৌধুরী বলেন, কুত্তাগুলোর নাম বলে কি হবে। পরে তিনি পাঁচ ছেলে-মেয়ের নাম উল্লেখ করেন।
এরা হলেন, সুবল চৌধুরী, ফারুক চৌধুরী, নিজার চৌধুরী ও নিজাম চৌধুরী এবং এক মেয়ে জেসমিন আরা বেগম স্বামী ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ সরকারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে রয়েছেন। নাতিদের নাম বলতে চাননি তিনি।
রিয়াজুল হক আরও বলেন, তিনি কাপড়ের আড়তদারী করতেন। খুকনী এলাকার হাজী সাত্তার, হাজী সালাম ও মজিবর হাজীসহ শাহজাদপুর ও এনায়েতুপরে তাঁতিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাপড়ের ব্যবসা করেন। এর মধ্যে খুকনীর সাত্তার হাজী তার ব্যবসার আগে পার্টনার ছিলেন। তবে বর্তমানে পার্টনার নেই। এ কারণে সাত্তার হাজী তার লোকজন দিয়ে বেদম মারপিট করেছেন তাকে।
তবে সাত্তার হাজীর ছেলে হাজী লালমিয়া বলেন, তার বাবা ৪০ বছর আগে সিলেটে ব্যবসা করতেন। এখন আর করেন না। রিয়াজুল হক চৌধুরী যে সাত্তার হাজীর কথা বলেছেন তার বাবা সেই সাত্তার হাজী নাও হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন বৃদ্ধ রিয়াজ উদ্দিন। সে সময় তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠানো হয়েছিল। এরপর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি। গত ২১ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে অবস্থান করছিলেন তিনি। পরে রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে রামেক থেকে আসা তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে তার শরীরে পুরাতন এ্যাজমাসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগ থাকায় হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন বৃদ্ধাশ্রমে তাকে রাখা হয়। তার মৃত্যুর পরে পুলিশ বিভিন্নভাবে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় তিনদিন পর রবিবার (১০ মে) আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহজাহান আলী বলেন, বৃদ্ধ মারা যাওয়ার পরে তার মরদেহ তিন দিন মর্গে ছিল। তার কোনো আত্মীয়-স্বজন না পাওয়ায় পুলিশ নিয়ে গিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ৭ মে রাতে ওই বৃদ্ধ মারা যান। তার সঠিক পরিচয় ও কোনো আত্মীয় স্বজন বা নিকটস্থ আত্মীয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। যার কারণে ১০ মে আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে তার দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। সূত্র: বাংলানিউজ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন