কানাডায় কুইবেক প্রদেশে প্রতিদিনের ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, হাসপাতালে ভর্তির চাপ এবং কোভিড-১৯ এর প্রসারকে কমিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে লকডাউনের পরিধি আরও ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ বিদ্যালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কুইবেক সরকার গতকাল শনিবার (৯ জানুয়ারী) থেকে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আরও ৪ সপ্তাহ রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সমস্ত কুইবেক প্রদেশে কারফিউ জারি করেছে। আর যারা এই কারফিউ অমান্য করবেন তাদেরকে কমপক্ষে এক হাজার ডলার থেকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
এই লকডাউন চলাকালে অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা বন্ধ থাকবে। তবে কার্বসাইড পিকআপের অনুমতি দেওয়া হবে। রেস্তোঁরা, জিম এবং থিয়েটারগুলি বন্ধ থাকবে। আগামীকাল সোমবার (১১ জানুয়ারী) পরিকল্পনা অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি চালু হবে। তবে ৫ ও ৬ বছরের গ্রেডের শিশুদের মাস্ক পড়তে হবে। হাই স্কুলগুলি আরও এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। আর যারা সেখানে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য গ্রন্থাগারগুলি উন্মুক্ত থাকবে।
এই লকডাউন চলাকালীন সময়ে মুষ্টিমেয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কিছুই বন্ধ থাকবে। যারা কারফিউয়ের সময় বাইরে থাকবেন এক বিশেষ ক্ষমতা বলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে এবং যদি তারা উপযুক্ত জবাব দিতে না পারেন তাহলে তাদের জরিমানা করা হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার সময় ফেসবুক থেকে সকল কুইবেক বাসীদের স্মার্ট ফোনে মেসেজ আসবে, রাত ৮টার মধ্যে ঘরের ভিতরে থাকুন বাইরে গেলেই জরিমানা।
কুইবেকের প্রিমিয়াম ফ্রেঁওয়েস লেগাল্ট বলেন, "কারফিউয়ের মূল কারণ হলো জনগণকে একসাথে জড়িত হওয়া থেকে রোধ করা। মানুষ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারলেই এই মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।" অন্যদিকে, গত শুক্রবার একটি টুইট বার্তায় কুইবেক প্রদেশের জননিরাপত্তা মন্ত্রী জেনেভিভ গিল্বল্ট জানিয়েছেন, পুলিশ এই সপ্তাহান্তে খুব দৃশ্যমান হবে। আসুন ঘরে বসে থাকি, জীবন বাঁচাই।
এই কারফিউ সময়কালীন শহরে প্রায় ১০০ জন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। অনেকেই এই কারফিউ না দেয়ার জন্য প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু নাগরিক অধিকারের আইনজীবী বলছেন কারফিউ ন্যায়সঙ্গত। কুইবেক ছাড়াও কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে এই মহামারী ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্টারিও প্রভিন্স গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত লক ডাউন চলছে। কিন্তু এই লোকডাউন আরও বর্ধিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কুইবেক শহরে ১৯১৮ সালে স্পেনিশ ভাইরাসের সময় সর্বপ্রথম কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তখন অনুমান করা হয় যে বিশ্বের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা এক তৃতীয়াংশ লোক এই স্পেনিশ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছিল। এদিকে, লকডাউন ঘোষণার অংশ হিসাবে কুইবেক প্রদেশে টিকা দেওয়ার সময়রেখাও ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৩ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ হাজার ৮ ৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৮ জন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ