মেহেরপুরের রাস্তাঘাট ও ফসলি জমির আশপাশে ভরে গেছে বিষাক্ত আগাছা-নীরব ঘাতক পার্থেনিয়াম। এ বছর বেশি বিস্তার লাভ করেছে সড়কের দুই ধার ও অনাবাদি জমিতে। এ আগাছা মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। ব্যাপকহারে কমিয়ে দেয় ফসলের ফলন, প্রাণঘাতী গবাদি পশুর জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ আগাছা বৃদ্ধি পাওয়ায় জীববৈচিত্র্য গুরুতর হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিনষ্ট হতে পারে মানুষ ও প্রাণীর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ। জমির ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মানুষ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে এই আগাছা অল্প দেখা যেত। এখন তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মুজিনবনগর-দর্শনা, প্রধান সড়ক ও মেহেরপুর-শোলমারি-কাথুলীসহ জেলার প্রায় সব রাস্তায় এ বছর ব্যাপকহারে পার্থেনিয়াম দেখা যাচ্ছে। এসব পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করাসহ অপসারণ বিষয়ে কাউকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পার্থেনিয়াম অপসারণসহ এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করা দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। সদর উপজেলার মদনা ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কবির উদ্দিন বলেন, পার্থেনিয়ামের নাম কখনো শুনিনি। এর ক্ষতিকর দিকও জানি না। রাধাকান্তপুর গ্রামের কৃষক কালম শেখ বলেন, পাঁচ বছর আগেও এই আগাছা দেখিনি। এখন জেলার প্রতিটি সড়কের দুই ধারসহ অনাবাদি পতিত জমিতে ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম আগাছায় ভরপুর। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন আলী আহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের মসজিদের পাশে সামান্য অনাবাদি জমি রয়েছে। ওই জমিতে এখন আগাছায় ভরে গেছে। আমরা কিছুদিন আগে আগাছা কেটেছিলাম। এগুলো কাটার পর আমাদের শরীরে চুলকানি দেখা দিয়েছিল। চুলকানো স্থান ফুলে যায়।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পরিবেশবিদ গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, পুরো আগাছাটিই ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফুলের রেণুতে অবস্থিত ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ ‘পার্থেনিন’। এই আগাছা আমাদের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়। গরু আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের চামড়ায় এ রস লাগলে সেখানে ক্যান্সার হতে পারে। এর পুষ্পরেণু বেগুন, টম্যাটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে। পার্থেনিয়াম খাওয়ার পর মহিষ, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া ও ছাগলের মুখে ও পৌষ্টিকতন্ত্রে ঘা, যকৃতে পচনসহ নানা রোগ দেখা দেয়। তাই এটা দ্রুত নির্মূল করা প্রয়োজন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, আগাছাটি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মাঠ দিবসে এর ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ১-১.৫ কেজি হারে আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করলে এই গাছ পুরোপুরি নষ্ট হয়। লবণের ১৫% দ্রবণে (১ লিটার পানি+১৫০ গ্রাম লবণ) এর ওপর ছিটিয়ে দিলে আগাছা শুকিয়ে যায়। তারপর শুকনো গাছে আগুন ধরিয়ে দিলেই ধ্বংস করা যায় সহজেই।