টাঙ্গাইল জেলা ও উপজেলা শহর থেকে শুর' করে গ্রামাঞ্চলে ভেজাল, নকল, নিম্নমান ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে ছেয়ে গেছে। এসব ওষুধ ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মানুষ সুস্থ্য হওয়ার পরিবর্তে নতুন করে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেডের মাধ্যমে এ সব নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। এক শ্রেণীর চিকিৎসকরা মোটা অংকের উপঢেৌকন পেয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে এসব ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। আর এসব ওষুধ শহরাঞ্চলে কিছুটা কম বিক্রি হলেও ঠাঁই করে নিচ্ছে গ্রামাঞ্চলের ওষুধের বাজার।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে শুরম্ন করে গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠা ফার্মেসিগুলোতে দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, বিক্রি হচ্ছে, নিম্নমানের ভেজাল মিশ্রিত ওষুধও। টাঙ্গাইল শহরের বিজয় ফার্মেসির মালিক বিজয় দেব নাথ জানান, ডাক্তার সাহেবরা যেভাবে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন, সে অনুযায়ীই আমরা রোগীদের কাছে ওষুধ বিক্রি করে থাকি। আর যে ওষুধগুলো ডাক্তারা বেশি লিখেন আমারও ফার্মেসিতে সে ধরনের ওষুধ রাখার চষ্টো করি। যাতে কোনো রোগী ওষুধ না পেয়ে ফিরত না যায়।
এদিকে, এক শ্রেণীর চিকিৎসক নানা ধরনের উপঢেৌকন পেয়ে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের তৈরী করা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিচ্ছেন। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে ওই ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে চিকিত্সকদের ওষুধের নমুনা (স্যাম্পল) দিলেই হতো। এখন আর ওষুধের নমুনা তারা নেন না। তাদের এখন মোটা অংকের উপঢেৌকন দিতে হয়। যে কোম্পানী যত বেশি উপঢেৌকন দিতে পারবেন সেই কোম্পানীর ওষুধ বেশি লেখা হয়। আর তাইতো ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা কোম্পানীর পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের বাসার ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, ফ্লাট ও বিমানের টিকিটও দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ক্লিনিকে ও ফার্মেসিতে বসা চিকিত্সকদের চেম্বারে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা হরহামেশাই ভীড় করে থাকেন। এমনকি চিকিত্সক দেখিয়ে রোগী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই প্রতিনিধিরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র চেক করেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। কারণ উপঢেৌকন পাওয়ার পরও ডাক্তার সাহেব ওই কোম্পানীর ওষুধ লিখেছেন কিনা? আর এতে করে চিকিত্সকরা রোগীর রোগের চাহিদা মতো ওষুধও লিখতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই অখ্যাত কোম্পানীগুলোর নিম্নমানের ও ভেজাল মিশ্রিত ওষুধের নাম লিখতে হচ্ছে। আর রোগীরা এসব ওষুধ কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, কোনো কোনো কোম্পানীর একটি ক্যাপসুলের দাম ১৪-১৫টাকা। আবার একই গ্র'পের অন্য একটি কোম্পানী ক্যাপসুল পাওয়া যায় ৩-৪টাকায়। তাই গরীব ও স্বল্প আয়ের রোগীদের জন্য ওই কমদামী ওষুধই লিখেন চিকিত্সকরা। ওষুধের বাজারে সরকারের পর্যাপ্ত তদারকী ও নজরদারী না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের ওষুধ, ভেজাল ওষুধ ও বিক্রয় নিষদ্ধি ওষুধ বিক্রি থেকে বিরত থাকার জন্য টাঙ্গাইলের সকল ফার্মেসি মালিকদেরকে প্রতিনিয়ত নোটিশ দিয়ে আসছি। এরপরও কোনো ফার্মেসিতে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেলে তাদের বির'দ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক আহসান হাবিব বলেন, 'আমরা কোনো কোম্পানীর ওষুধকেই নিম্নমানের, ভেজাল বলতে পারি না। কারণ যে কোম্পানীগুলো ওষুধ বাজারজাত করছেন তারা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েই করছেন। এছাড়া জেলা পর্যায়ে ওষুধের মান যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই। গত বছর টাঙ্গাইলে বিভিন্ন ওষুধ ফার্মেসিগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ৭টি অভিযান চালানো হয়েছিল। এর মাধ্যমে বনানী মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসিতে মিস ব্যান্ডের (সরকার অনুমোদন বিহীন) ওষুধ পাওয়ার পর তা জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া কোনো ওষুধ সন্দেহ হলে আমরা সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাই। কোনো প্রকার নিম্নমান বা ভেজাল ধরা পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ