রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে জন্মেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া। নারী শিক্ষা এবং নারী জাগরণে তার সংগ্রাম ছিল আমৃত্যু। তবে তিনি কৃষি ও প্রকৃতিপ্রেমী ছিলেন। তিনি পায়রাবন্দে থাকাবস্থায় আরেকটি বিষয়ে আন্দোলন করেছেন সেটি হলো ভেরেন্ডা গাছ নিয়ে। সে সময় বাড়ির সীমানায়, জমির আইলে কিংবা পথের পাশে অনেকেই ভেরেন্ডা গাছ লাগাতেন। এই গাছের তেল জ্বালানী হিসেবে এবং খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেত। সে সময় এখনকার মতো বিজলিবাতি ছিল না। অনেকের বাড়িতে আলো জ্বালানোর মতো প্রদীপটুকুও জুটতো না। সে সময় তিনি প্রজাদের জ্বালানী এবং ভোজ্যতেলের চাহিদার কথা চিন্তা করে প্রজাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতেন বাড়ির সীমানায় ভেরেন্ডা গাছ লাগাতে হবে। এতে বাড়ির সীমানা সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি জ্বালানী তেলের চাহিদাও মিটবে। এটি এক সময় সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। সে সময় শুধু পায়রাবন্দ নয়, রোকেয়ার প্রচার-প্রচারণায় পুরো রংপুর অঞ্চলে ভেরেন্ডা চাষে বিপ্লব ঘটে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির সীমানায় অথবা পরিত্যক্ত স্থানে ভেরেন্ডা চাষ হতে থাকে। এসব তথ্য পাওয়া গেছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া বিশেষজ্ঞ রফিকুল ইসলাম দুলালেরর কাছ থেকে। রোকেয়ার এই আন্দোলন নিয়ে তার লেখা একটি নিবন্ধ একাধিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া সেসময় ভেড়েন্ডা চাষে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য কাকিনার কবি শেখ ফজলল করিমসহ বিভিন্ন জমিদার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। সে সময় ভেড়েন্ডা বা ভেন্ডি আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠৈছিল। কালের পথ পরিক্রমায় এই অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ভেরেন্ডার সেই ঐতিহ্য। তবে ইতিহাসপ্রেমী দু-একজন এখনও রোকেয়ার ভেরেন্ডা গাছ রোপণের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন। সম্প্রতি ভেড়েন্ডা গাছের দেখা পাওয়া গেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সামনের ভেষজ বাগানে।
এই গাছটি সম্পর্কে বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, ভেন্না বা রেড়ি নামেও পরিচিত একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বীজ থেকে ক্যাস্টর অয়েল (ক্যাস্টর তেল) তৈরি হয় যা বিভিন্ন শিল্প ও ভেষজ কাজে ব্যবহৃত হয়। ছোটখাটো উদ্ভিদটির গাছের পাতা একক, বেশ বড়, গভীরভাবে খাঁজকাঁটা, ছাতার মতো এবং গাঢ় সবুজ রঙের, বোঁটা লম্বা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফলক গোলাকৃতি ও লতিযুক্ত। একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মে। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, একলিঙ্গ। ফল গোলাকার, কাঁটাভরা ক্যাপসুলের মতো। প্রতি ফলে তিনটি মসৃণ, দাগযুক্ত বীজ থাকে। প্রতিটি বীজের গোড়ায় ছোট, কোমল একটি স্পঞ্জের মতো স্ফীতি থাকে। এর বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।
ভেড়েন্ডার আদি নিবাস সম্ভবত আফ্রিকা। এক সময় বাংলাদেশর সব স্থানেই এর জন্ম হতো। গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির সীমানায় ব্যাপক চাষও হতো। এই গাছে ফুল ও ফল হয় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। ভেরেন্ডা জলাভূমিতে সাধারণত বাঁচে না। অনুকূল পরিবেশ পেলে সারা বছরই ফল ধরে । এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করাসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি নিরাময়ে এ তেল ব্যবহার করা হতো।
বিডি প্রতিদিন/এএ