পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পূর্ব মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন। বাড়ি পার্শ্ববর্তী বালিয়াতলী ইউনিয়নের মুসুল্লীয়বাদ গ্রামে। বাড়িটির চারপাশ গাছ-গাছালিতে ভরা। নেই কোন যান্ত্রিক শব্দ দূষণ। তাই হাজারো সাদা বক, পানকৌঁড়ি আর বাদুর বেছে নিয়েছে এ বাড়িটিকে। বাসা তৈরি করে থাকছে বছরের পর বছর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন পাখির মেলা বসেছে। বাড়িটিতে প্রবেশ করলে এসব পাখিদের খুনসুটি আর কলরবে প্রাণ জুড়িয়ে যায় যে কারও। প্রায় ৪০ বছর ধরে এসব পাখিরা বসবাস করায় এলাকাবাসীর কাছে বাড়িটি পরিচিতি পেয়েছে পাখির বাড়ি হিসেবে।
পরিবেশবিদরা জানান, পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া প্রকৃতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। পাখি থাকলে গাছ থাকবে, গাছ থাকলে ফুল ও ফল থাকবে। পাখি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বীজকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বীজ থেকে গাছ হচ্ছে এবং সেই গাছই আমাদের অক্সিজেনের ভান্ডার।
তাদের ভাষ্যমতে, সব গাছই পাখিদের ঘর হয় না। যেখানে নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে সে রকম স্থানকেই পাখিরা ঘর হিসেবে বেছে নেয়।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক আখতার হোসেনের বাড়ির গাছে বসবাস করছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। দিনশেষে পাখিরা ঘরে ফেরে। গাছের ডালপালাই তাদের সেই ঘর। অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির ডাক ও মলত্যাগের কারণে কিছুটা বিরক্ত হলেও তাদের সঙ্গে তৈরি হয়েছে সখ্যতা। অধিকাংশ সময় ডাক দিলেই পাখিরা গাছ থেকে চলে আসে হাতের নাগালে।
তাদের ভাষ্যমতে, সব গাছই পাখিদের ঘর হয় না। যেখানে নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে পাখিরা সে রকম স্থানকেই ঘর হিসেবে বেছে নেয়। সেখানেই বাসা করে থাকতে শুরু করে তারা। ঠিক সে রকমই মায়া মমতায় ভরা শিক্ষকের বাড়িতে বাসা বানিয়েছে বিভিন্ন প্রাজাতির পাখি।
গ্রামের বাসিন্দা সায়েম হোসেন বলেন, ছোট থেকেই দেখছি। শিক্ষক আখতারের বাড়িতে প্রচুর পাখি বসবাস করছে। বাড়িটিতে প্রবেশ করলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমরা সব সময় নজরদারি রাখি, যাতে পাখিদের কেউ সমস্যা করতে না পারে।
একই এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ইকরামুল হোসেন বলেন, পাখিদের বিরক্ত করা তো দূরের কথা, তাদের নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সব সদস্যরা আলাদা নজর রাখেন। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, পাখিদের নিরাপদ চলাফেরার জন্য এলাকাবাসীও যথেষ্ট সচেতন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এসব পাখিগুলো শিক্ষক আখতার হোসেনের বাড়িতে থাকছে। তাই এ বাড়িটি পাখির বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
শিক্ষক আখতার হোসেন বলেন, অনেক সময় অনেক আহত পাখি আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের চিকিৎসা দেই। আবার অনেক পাখির বাচ্চা খাবার খেতে পারে না। গাছ থেকে নামিয়ে সেগুলোকে নিয়মিত খাবার খাওয়াই। পরিবারের সবাই পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব সময় নজর রাখি। এছাড়া পাখিদের সঙ্গে আমার পরিবারের সবারই একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। তিনি আশা করেন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখি সুরক্ষায় সমাজের সবাই এগিয়ে আসবেন।
মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কেএম মনিরুজ্জামান বলেন, পাখির আবাসস্থল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শিক্ষক আখতারের বাড়ি পরিদর্শন করে ভালো লেগেছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের জন্য তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত