চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির কারখানা অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলে লাগা আগুন গতকাল মধ্যরাতেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আট তলা ভবনের ওপরের তলার এক অংশ ধসে পড়েছে। এদিন বেলা ২টার দিকে লাগা ভয়াবহ আগুন রাত ১২টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টার চেষ্টায়ও নেভানো সম্ভব হয়নি। আগুন পুরো ভবন গ্রাস করে নিয়েছে। প্রতিটি তলা দাউদাউ জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল থেকে জানান, প্রথমে ভবনের ওপরের দিকে আগুন লাগে। পরে নিচের তলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। পুরো ভবনে আগুন জ্বলছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের প্রচ- তাপে ভবনের কাছে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। কিছুটা দূর থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানি ছিটাচ্ছেন। কিন্তু তাতে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। আশপাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, এখনো পাশের ভবনে আগুন ছড়ায়নি। তবে আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি।
জানা গেছে, ভবনটিতে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত তোয়ালে, অ্যাপ্রোন, মাস্কসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি হতো। এ কারণে ভিতরে দাহ্য কেমিক্যালসহ বিপুল পরিমাণ কাপড় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিতরে থেমে থেমে ছোট ছোট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পেতে হয়। দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকায় পুরো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ভবনে প্রায় ৭০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তবে আগুন লাগার পর তাঁরা দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে যান। পরে ফায়ার সার্ভিস ২৫ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করে। এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ২৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের আগুন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভবনের দুই দিক থেকে পানি ছিটানো হচ্ছিল।
চট্টগ্রাম শিল্পপুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, কারখানায় প্রায় ৮০০ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। আগুন লাগার পর সবাই বেরিয়ে এসেছেন। কেউ ভিতরে আটকে থাকার কিংবা প্রাণহানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর আসে নিয়ন্ত্রণকক্ষে। এরপর সিইপিজেড, বন্দর, কেইপিজেড, আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন থেকে প্রথমে আটটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এরপর যোগ দেয় আরও আটটি ইউনিট। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যায়। শুরু থেকেই সিইপিজেডে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত টিম আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। বিকালে নৌবাহিনীর পাঁচটি ও বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট যোগ দেয়।