চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের ফলে বিপর্যয় নেমেছে। এ পাবলিক পরীক্ষার ফলে ধস নামার পেছনে জানা গেছে বেশ কিছু কারণ। এবার অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৬০ শতাংশের মধ্যে। শুধু ঢাকা ও বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে পাসের হার ৭০ শতাংশের ঘরে। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইংরেজিতে তুলনামূলক খারাপ ফল প্রভাব ফেলেছে ছাত্রছাত্রীদের পুরো ফলাফলে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে এবার পাসের হারে সবচেয়ে তলানিতে থাকা কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজিতে পাস করেছেন ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ইংরেজিতে ৬৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, যশোরে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সিলেটে ৬৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। ইংরেজিতে সবচেয়ে ভালো করেছেন বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। তার পরেই রয়েছে ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ইংরেজিতে ৭৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। বিশেষ করে যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি ফেল করেছে। সেখানে ইংরেজিতে ফেলের হার ৪৫ শতাংশের বেশি। ঢাকা ও বরিশাল ইংরেজিতে কিছুটা ভালো করলেও অন্য বোর্ডগুলোতে খারাপ করায় গড় ফলাফলে পিছিয়ে গেছি আমরা। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার ব্যাপারে অনেকটাই বিমুখ। তারা অনেকটাই পড়ার টেবিল থেকে দূরে ছিল বলে আমাদের ধারণা। এ ফল নিয়ে আমাদের চর্চা করতে হবে।
এদিকে দেখা গেছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে হিসাববিজ্ঞানের ফলে পিছিয়ে গেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ বিষয়ে পাস করেছেন ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ এ বিভাগের ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
এ ছাড়া বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তুলনায় মানবিকের শিক্ষার্থীরা ফলাফলের দিকে পিছিয়ে রয়েছেন। মানবিকের ফলে ধস হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে- বিজ্ঞানে সব বোর্ড মিলে গড়ে ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস করেছেন ৫৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। আর মানবিক বিভাগে পাস করেছেন মাত্র ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মানবিকের ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ আমলে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রকৃত ফলটিই দিয়েছি। কাউকে ফেল করিয়ে দেওয়া বা পাস করিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিইনি আমরা। আর ফল প্রকাশের পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার এবং জিপিএ-৫ আগের বছরের তুলনায় কম। আমরা কোনোভাবেই এই ফলাফলের দায় এড়াতে পারি না। এ ফলাফল আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলাম যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই আমরা।