ইন্দোনেশিয়া নিজেদের সামরিক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে চীনের তৈরি ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে–১০সি কিনছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাফরি শামসুদ্দিন বুধবার জানিয়েছেন, চীন নির্মিত ৪২টি চেংদু জে–১০সি যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে থেকে যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে জাকার্তা।
চীন ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া তুরস্ক ও ফ্রান্সের কাছ থেকে যথাক্রমে ৪২টি করে যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করবে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশটির বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে মোট ১৩২টি যুদ্ধবিমান।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, রাজধানী জাকার্তায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাফরি শামসুদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এই বিমানগুলো জাকার্তার আকাশে উড়বে।’ তবে তিনি কেনা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চুক্তিটি আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে এবং এর ভূরাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রেগা ওয়েনাস প্রথমবার জে–১০ কেনার বিষয়টি প্রকাশ করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী তখনো এই চীনা যুদ্ধবিমানগুলোর সক্ষমতা যাচাই করছিল, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়— এগুলো দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে শক্তিশালী করতে পারবে।
অর্থমন্ত্রী পুরবায়া ইউধি সদেও বুধবার জানান, চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে তাঁর মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তুত আছে, শুধু এখন নিশ্চিত হতে চাই, কখন বিমানগুলো বেইজিং থেকে জাকার্তায় পৌঁছাবে।’
বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের তৈরি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর অনেকগুলোই পুরোনো এবং সেগুলোর আপগ্রেড বা প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।
গত জুনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ঘোষণা দেন, তুরস্ক ইন্দোনেশিয়ায় ৪৮টি কান যুদ্ধবিমান রপ্তানি করবে। এই বিমানগুলো তুরস্কেই তৈরি হবে এবং সেখান থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হবে।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির ৪২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সম্পন্ন করে। এসব বিমানের প্রথম চালান ২০২৬ সালের শুরুতে পাওয়ার কথা। পাশাপাশি দেশটি ফ্রান্সের তৈরি দুটি স্করপিন ইভলভড সাবমেরিন এবং ১৩টি থ্যালেস গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রাডার কেনার ঘোষণাও দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ–এর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বেনি সুকাদিস বলেন, সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্তের ভূরাজনৈতিক প্রভাব অবমূল্যায়ন না করা। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল থাকার পর চীন থেকে বড় পরিসরে অস্ত্র কেনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা অভিমুখে পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’
সুকাদিস আরও সতর্ক করে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে চীনের প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত।’
সূত্র: আল–জাজিরা, এপি