চীনে খ্রিস্টান ধর্মাবলীর ৩০ অনুসারীকে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি একটি বৃহত্তর দমন পীড়নের সূচনা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার গ্রেস জিন ড্রেক্সেল নামের এক ব্যক্তিকে তার বাবা একটি বার্তা পাঠান। ড্রেক্সেলের বাবা একজন যাজক। সেখানে তিনি অন্য এক যাজকের জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। যিনি কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ আছেন। বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের শেনজেন শহর সফরের সময় ওই যাজককে আটক করা হয়।
ড্রেক্সেল বলেন, এরপর আমার মা আমাকে ফোন করেন। বলেন, তিনি আমার পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিবারটি বুঝতে পারেন, গ্রেস জিনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে চীনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খ্রিস্টানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা চীনে পাস হওয়া এক আইনের কথা বলেছে। যা আন্ডারগ্রাউন্ডের গির্জার কার্যকলাপ রোধ করা ও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গীর্জার সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। নাস্তিক কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও চীনে যথেষ্ট পরিমাণে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী রয়েছে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, চীনে বর্তমানে ৩ কোটি ৮০ লাখ প্রোটেস্ট্যান্ট ও ৬০ লাখ ক্যাথলিক রয়েছেন। অধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, এক কোটির বেশি চীনা নাগরিক অনিবন্ধিত গীর্জায় প্রার্থনা করেন। যেখানে রাষ্ট্র অনুমোদিত আদর্শ অনুসরণ করা হয় না। চীন সরকারের ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ বেশ কয়েকটি গীর্জার ওপর প্রভাব ফেলেছে। অসংখ্য গীর্জা ধ্বংস করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে খ্রিস্টানদের কয়েকটি অ্যাপ। ২০০৫ ও ২০১৮ সালে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর নিয়ম কঠোর করেছে।
২০১৬ সালে চীনা নেতা শি জিনপিং ধর্মকে ‘চীনাকরণ’ করার আহ্বান জানান। ২০১৮ সালের নিয়মের কারণে জিওনের মতো আন্ডারগ্রাউন্ডের চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে জনসম্মুখে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হন। এর পরের বছরগুলোতে কয়েকজন যাজককে গ্রেফতার ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিতে দেখা যায়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পুনরায় চীনা কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে দেখা যাচ্ছে। মে মাসে গাও কুয়ানফু নামের এক যাজককে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সন্দেহজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। একই মাসে লিনফেন গোল্ডেন ল্যাম্পস্ট্যান্ড চার্চের সানশিকে জালিয়াতির কারণে কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অধিকার বিষয়ক গোষ্ঠীগুলো ওই অভিযোগগুলোকে মিথ্যা দাবি করে এর সমালোচনা করে। এরপর সেপ্টেম্বরে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করে দেয়। একে আন্ডারগ্রাউন্ড চার্চগুলোর অনলাইন কার্যক্রম সীমিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। গত কয়েক মাসে জিয়ন চার্চের সদস্যরা পুলিশের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। গত শুক্রবার চীনা কর্তৃপক্ষ দশটি শহরে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। এর মধ্যে বেইজিং ও সাংহাই শহরও রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতেও একটি কপি এসেছে। যেটি গ্রেস জিনকে গ্রেফতারের অফিসিয়াল নোটিশ। এতে বলা হয়েছে, জিনকে বর্তমানে বেইহাইতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, দ্য টাইমস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে
বিডি প্রতিদিন/একেএ