স্বরাস্ট্র মন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু ‘নোয়া ভাই’ বাহিনীর প্রধান মো. বাকী বিল্লাহ ওরফে নোয়া সহ ১২ জন সদস্য। সুস্থ্য-স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আজ শনিবার দুপরে দেশের সর্ব দক্ষিনের সমূদ্র সৈতক কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেট মাঠে র্যাব-৮ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ১শ’৫ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তারা।
এর আগে র্যাব-৮’র একটি দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের পুটিয়া খালে জলদস্যু বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গত শুক্রবার বিকেলে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করেন ‘নোয়া ভাই’ বাহিনী প্রধান সহ ১২জন জলদস্যু। এ সময় তারা অন্ধকার জগত ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় তাদের হেফাজতে থাকা ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ১শ’ ৫ রাউন্ড গুলি র্যাব-৮ এর কাছে সমর্পন করেন। এছাড়া ইতিপূর্বে ৬ দফায় আত্মসমর্পন করা ৭ দস্যু বাহিনীর ৬০জন সদস্যকে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে আর্থিক অনুদান এবং শীত বস্ত্র বিতরন করেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী।
জলদস্যু আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাস্ট্র মন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "এখনও যারা সুন্দরবনের গহীনে লুকিয়ে রয়েছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের আহবান জানান। মন্ত্রী বলেন, সরকার অহেতুক রক্তপাত চায় না। তাই প্রানে বাঁচতে হলে সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো অন্যান্য জলদস্যু বাহিনীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পন করে আইনের আশ্রয় গ্রহনের আহবান জানাচ্ছি।"
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, "সুন্দরবন হলো পৃথিবীর বিখ্যাত স্থান। জীবিকার জন্য জেলেরা সুন্দরবনে মৎস্য আহরন করে। এছাড়া দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দেখতে আসে। তাই সুন্দরবনকে সুরক্ষা করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। শুধুমাত্র র্যাব নয়, সরকারের অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরকার যেভাবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করেছে, ঠিক তেমনি জনগনের সহায়তায় সুন্দরবনও জলদস্যু মুক্ত করার দারপ্রান্তে রয়েছে। ইতিপূর্বে আত্মসমর্পনকারী ৭ দস্যু বাহিনীর ৬০ সদস্যকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এসে তাদের কর্মসংস্থান সৃস্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সরকার তাদের পুনবার্সনের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।"
র্যাব-৮ কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো. আনোয়ার উজ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, "এখনও পূর্ব সুন্দরবনে ২টি এবং পশ্চিম সুন্দরবনে ৬টি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয়। তারা র্যাবের নজরদারীতে রয়েছে। প্রানে বাঁচতে চাইলে তাদের দ্রুত আত্মসমর্পনের পথ বেছে নিতে হবে"।
একই সাথে স্বাভাবিক জীবনের আশায় আত্মসমর্পন করা সাবেক জলদস্যুরা যাতে সমাজের সাথে মিলেমিশে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় প্রশাসন সহ জনগনের সহযোগীতা কামনা করেন। কেউ যদি তাদের স্বাবাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটায় তাহলে র্যাব তাদের ছেড়ে দেবেনা বলে হুশিয়ারী দেন তিনি। নিরাপদ সুন্দরবন প্রশ্নে সরকার কাউকে ছাড় দেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
র্যাব-৮’র উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক কেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী এবং পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
আত্মসমর্পন করা ‘নোয়া বাহিনীর’ প্রধান মো. বাকী বিল্লাহ ওরফে নোয়া বলেন, কু-পরামর্শে অন্ধকার জগতে গিয়েছিলেন। দস্যুতা করে তেমন কিছুই করতে পারেননি। কামিয়েছেন শুধুই বদনাম। ওই জীবনের কোন নিশ্চয়তা ছিলো না। অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের আশায় সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি সহ অন্যান্যরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে থাকতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সরকার সহ জনগনের সহায়তা চেয়েছেন বাকী বিল্লাহ সহ অন্যান্যরা। এখনও দস্যুতায় লিপ্ত থাকা অন্যান্য বাহিনীগুলোকেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সরকারী আহবানে সাড়া দেয়ার কথা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান এবং র্যাব সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এর আগে গত বছর মোট ৬ দফায় ৭ দস্যু বাহিনীর ৬০জন সদস্য ১৩৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭ হাজার ৫শ’ ৩১ রাউন্ড গুলি সহ আত্মসমর্পন করেন। এ নিয়ে মোট ৭২জন জলদস্যু ১৬৪টি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৮ হাজার ৬শ’ ৩৬রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেন।
এর ফলে সুন্দরবন প্রায় জলদস্যু মুক্ত হয়েছে। এতে বেজায় খুশী জেলে, মৎস্য ট্রলার মালিক এবং আড়তদাররা। তারা জানিয়েছেন, আগে সমূদ্র রাতে আঁধারে বাতি জ্বালিয়ে মাছ শিকার করা যেতনা। দস্যুদের বছরে কোটি কোটি টাকা মুক্তিপন এবং চাঁদা দিয়ে সমূদ্রে মাছ শিকার করতে হতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৭ জানুয়ারি, ২০১৬/ এ মজুমদার/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৬