সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে ৪০ দিনের মধ্যে ৮ দিন কাজ না করে ভুয়া বিল করে টাকা তুলে আত্মসাতের পায়তারা করেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের কাছে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ায় তা ভেস্তে গেছে। তদন্তে চুরির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় রবিবার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ৮ দিনের ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা কেটে বিল প্রদান করেছেন। গরীব শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করে তাদের নামে চুরি করে বিল উত্তোলন করার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরোর এমন কাণ্ডে এলাকায় ছি-ছি রব ওঠেছে।
জানা যায়, দরিদ্রদের জন্য সরকার ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রামকৃষ্ণপুর ইউপিতে ১৬৮ দরিদ্র শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করবে এবং জনপ্রতি ৮ হাজার করে টাকা পাবে। প্রতি শ্রমিক ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করবে। কিন্তু রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো ৪০ দিনের মধ্যে প্রতি শুক্র ও শনিবার কাজ বন্ধ রেখে প্রকল্প অফিসে কাজ হয়েছে বলে বিল জমা দেয়। পরে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে আসলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক বিল প্রদানের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সরেজমিনে তিনদিন তদন্ত করেন। তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যানের ৮ দিন চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে ৮ দিনের বিল কেটে নিয়ে বাকী টাকা দেয়ার জন্য বিল অনুমোদন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সম্পন্ন কাজ বন্ধ রেখেছিল। আর বাকী দিনগুলোতে কিছু কিছু জায়গায় অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে পুরো বিল করা হয়েছে। পুনরায় আরও তদন্ত করলে এ বিষয়টিই প্রমাণিত হবে।
তবে শুধু কর্মসৃজন প্রকল্প নয়, চেয়ারম্যান হিরোর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী এলজিএসপি প্রকল্পেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুদককে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর মতে, শুধু নামে ও চেহারায় হিরো নয়, এখন চুরিতে হিরো হয়েছে হিরো চেয়ারম্যান। থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
কর্মসৃজন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান হাসিব জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ না করে বিল জমা দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশে তদন্তে প্রমাণ হয় ৪০ দিনের মধ্যে ৮ দিন কাজ না করে বিল তুলে চুরির পায়তারা করেছিল। এ কারণে ৮ দিনের বিল কর্তন করা হয়েছে। কর্তনকৃত ২ লক্ষ ৮৮ হাজার সরকারী কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভুইয়া জানান, চুরি করে ৪০ দিনের বিল জমা দিয়েছিল। তদন্তের পর বিষয়টি ধরা পড়ায় ৮ দিনের বিল কেটে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরোর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজ করা হয়নি, তাই বিল কর্তন করা হয়েছে। কাজ না করে কেন বিল জমা দিয়েছিলেন? জবাবে তিনি বলেন, সেটি আপনাদের কেন বলব? এটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা জানেন-এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন।
বিডি-প্রতিদিন/০২ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব