ঘরোয়া আসরে নামার পরই একজন ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা। এটাই তো ক্যারিয়ারে বড় প্রাপ্তি। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা খুবই জরুরি। ১৯৭৩ সাল থেকেই মারদেকা কাপ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের আবির্ভাব। সেই থেকে লাল-সবুজের পথ চলা। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা নির্ভর করে ঢাকা লিগ বা অন্যান্য টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স প্রদর্শনে।
বর্তমানা যারা পেশাদার ফুটবলে নজর কাড়ছেন তারাই স্বপ্নের জাতীয় দলে খেলে থাকেন। অবশ্য খেলোয়াড় সিলেকশন নিয়ে আগে যেমনই বিতর্ক উঠত। এখনো তা হয়। কেউ কেউ আবার আক্ষেপ করে বলে থাকেন কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা সহজ হয়ে পড়েছে। লিগে এক বা দুটি ম্যাচ ভালো খেললেই হয়। চূড়ান্ত স্কোয়াডে তো থাকছেনই সে সঙ্গে বেস্ট ইলেভেনে খেলছেন। ভালোমতো যাচাইবাছাই হয় না বলেই মাঠের চিত্র বড্ড করুণ।
জাতীয় দলের মান বাড়াতে বাফুফে এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিদেশে লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানসম্পন্ন খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে খেলানো হচ্ছে। এর মধ্যে হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহামিদুলরা লাল-সবুজের জার্সিতে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছেন। প্রবাসীরা মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ার এনেছেন। সামনে কিউবা মিচেলসহ আরও কয়েকজনকে জাতীয় দলে দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ইংলিশ ফুটবল খেলা হামজাকে দেখে প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশে খেলা আগ্রহ বেড়েই চলেছে। বিশ্বের অনেক দেশই প্রবাসীদের খেলিয়ে লাভবান হয়েছে। বিশ্বকাপও জিতেছে এমন উদাহরণ তো ফ্রান্সকে দেওয়া যায়।
ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে বাংলাদেশও এমন উদ্যোগ নিয়েছে। যা প্রশংসিতও হচ্ছে। না করেও উপায় নেই। কেননা ফুটবল পাগল দেশের এমন নিম্নমানের মান আর কত সহ্য করা যায়। প্রায় ৫০ বছর হতে চলল জাতীয় দল খেলছে। সেখানে সাফল্য বলতে তেমন কিছুই নেই। সাফ জেতাটা যেন বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গেছে। ফুটবলের চেহারা বদলাতে প্রবাসী ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা ছিল না। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে ফল পাওয়া যাবে না। কয়েক বছরের মধ্যে জাতীয় দল দাঁড়িয়ে যাবে তা তো আশা করা যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে প্রবাসীদের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়লে দেশের ফুটবলে লাভের চেয়ে ক্ষতি তো হবে না? স্থানীয় খেলোয়াড়রা যখন দেখবে জাতীয় দলে প্রবাসীদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, তারা তো ভালো করার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। হামজারা দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণ ফেরানোর পর বাফুফে আসলেও প্রবাসীদের দিকেই চোখ ফেলছে। তাই তো প্রবাসীদের মেলা বসতে চলেছে। ৫২ ফুটবলারদের ট্রায়াল হবে ঢাকায়। ২৮, ২৯, ৩০ জুন চলবে বাছাই প্রক্রিয়া। মূলত বয়সভিত্তিক দলের জন্যই বাছাইপর্ব। যদি কেউ খুবই মানসম্পন্ন হন তাদের জন্য জাতীয় দলের দুয়ার খোলা থাকবে।
যা হচ্ছে তা ফুটবলের জন্য কতটা ভালো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বয়সভিত্তিক দলে যখন প্রবাসীরা খেলবে তখন তো দেশে নতুন ফুটবলারের দেখায় মিলবে না। হয়তো কেউ ফুটবলার হতে আগ্রহী হবেন না। এ ব্যাপারে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমি বলব এমন উদ্যোগ বাফুফের আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। আর এতে তো কোনো পার্থক্য দেখছি না। লোকালরা যেমন বাংলাদেশি তেমন প্রবাসীরাও। এতে দেশে আরও কোয়ালিটি ফুটবলারের দেখা মিলবে। জাতীয় দলে জায়গা পেতে তারা লোকাল ফুটবলে সেরা দিতে চাইবে। মাথায় থাকবে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে হলে ভালো খেলতেই হবে। এ জেদই হবে ফুটবলের বড় সম্পদ। আমি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলছি না। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে উঠেছিল। হামজারা আসার পর সেই পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস সামনে দেশে ভালোমানের ফুটবলারের সন্ধান মিলবে। মনে রাখতে হবে বিনা চ্যালেঞ্জে দল হয় ব্যর্থ। আমি বাফুফের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হোসেন এমিলিও একমত। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে কখনো খুব একটা কোয়ালিটি দেখা হতো না। লিগে ২/১টা ম্যাচ ভালো খেললেই জাতীয় দলে। এখন চ্যালেঞ্জের পরীক্ষা বাড়বে। এতে মন্দ কি, যারা ভালো করবে তাদের জন্যই দুয়ার খোলা থাকবে। এখানে প্রবাসী বা স্থানীয় সবই এক। সবাই বাংলাদেশি।’
দেশের ফুটবলের মন্দা কাটুক আরও সুন্দর হোক কে না চায়। হযবরল অবস্থার অবসান ঘটুক। মনে রাখতে হবে যারা চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়, তারাই প্রকৃত সৈনিক।’