গত ১২ জুন দিবাগত রাতে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। সে সময় ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আগ্রাসনের পাশাপাশি বেশ কিছু আবাসিক ভবনেও হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা। এছাড়াও হামলা চালিয়ে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ইসরায়েল।
এই আগ্রাসনের পাশাপাশি অশুভ আরেকটি হামলা চালিয়েছিল ইহুদিবাদী সেনারা। তারা ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফোন করে পরিবারসহ হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে অন্তত ২০টি ফোন করেছিলেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের দাবি ছিল ভয়াবহ, তারা শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফোন করে বলেছিলেন- ১২ ঘণ্টার মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের আত্মসমর্পণ করার ভিডিও বার্তা রেকর্ড করে সেগুলো ইসরায়েলের কাছে পাঠাতে হবে, অন্যথায় তাদের পরিবারের সদস্যদের ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট এ–সংক্রান্ত একটি অডিও হাতে পাওয়ার কথাও জানিয়েছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, এক ইসরায়েলি গোয়েন্দা ইরান রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এক জেনারেলকে ফোন করে বলছেন- আমরা আপনাকে হত্যা করব, আপনার পরিবার, আপনার সন্তানদের—সবাইকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলব। আমরা আপনার গলার শিরার চেয়েও কাছাকাছি আছি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩ জুন আকস্মিক হামলা চালিয়ে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে এসব ফোন করা হয়েছিল। ফোনগুলো করা হয়েছিল ইরানের ওই সব জেনারেলের কাছে, যারা নিহত শীর্ষ কমান্ডারদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
এভাবেই ভয় দেখিয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে জিততে চেয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইরানের একজন জেনারেলও আতঙ্কের কাছে মাথা নত করেননি। কেউ পালাননি, কেউ দেশদ্রোহিতা করেননি। এর ফলে ইসরায়েলকে এ অভিযানে পুরোপুরি ব্যর্থ হতে হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের ফাঁস করা ওই অডিওতে ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের এ কৌশল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- ইরান সরকারকে বিভক্ত করে ফেলা, যেন তারা দুর্বলতার মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগাতে পারে।
ইসরায়েলের ওই গোয়েন্দারা সম্ভবত মোসাদ বা দেশটির সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আমানের সদস্য। তারা প্রত্যেকে ফারসি ভাষায় পারদর্শী।
ইসরায়েলি গোয়েন্দারা আইআরজিসির জেনারেলদের ফোনে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন- যদি তারা ইরান সরকারকে সহযোগিতা করবে না উল্লেখ করে ভিডিও তৈরি করে তাদের কাছে না পাঠান, তবে জেনারেলদের তাদের পরিবারসহ হত্যা করা হবে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সেসব ভিডিও পাঠাতে বলেছিলেন।
অডিওতে ইসরায়েলি এক গোয়েন্দাকে বলতে শোনা যায়, “আপনি কি (নিহত ব্যক্তিদের) পরবর্তী তালিকার নাম হতে চান?”
তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট, জনসমক্ষে বিক্ষোভ সৃষ্টি করে ইরানের সেনাবাহিনীকে হতাশ করা এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
ইরানি জেনারেলদের এমন কোনও ভিডিও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি বা কোনও জেনারেলের দেশত্যাগের খবরও পাওয়া যায়নি। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস অব ইসরায়েল
বিডি প্রতিদিন/একেএ