গুলশান লেক ভিউ বা ঝিলপাড় নামে পরিচিত বাড্ডা-গুদারাঘাট সড়কটি খনাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও বড় গর্ত। বেশ কিছু জায়গায় উঠে গেছে পিচ ও কার্পেট। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। ব্যস্ততম এই সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সড়কটি দেখভাল করা নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে টানাপোড়েনে সড়কটি সংস্কার হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার যানজট কমাতে লেক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাড্ডা (হাতিরঝিল মোড়) থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত লেকের পাড়ে বাড্ডা-শাহজাদপুর অংশে ২.৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই সড়কটি তৈরি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যান চলাচলের জন্য ২০১৮ সালে খুলে দেওয়া হয় সড়কটি। এই রাস্তার ফলে যানজট কমাতে সুফল পাওয়া গেলেও বর্তমানে একেবারেই চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে সড়কটি।
রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে দুই সংস্থার মধ্যে সড়কটি নিয়ে সমঝোতা হয়। বুঝিয়ে দেওয়া হয় উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রকল্পের ৯ মাস বাকি থাকলেও সড়কটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, এই সড়কটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
হাতিরঝিলের গুদারাঘাট থেকে সড়কটি বারিধারা দূতাবাস এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাঁশতলা পর্যন্ত যার দৈর্ঘ্য এক দশমিক ৭ কিলোমিটার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধিভুক্ত বাড্ডা-শাহজাহাদপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি।
পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মূল সড়কের বিকল্প হিসেবে এটি খুবই পরিচিত রাস্তা। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার ফলে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এই রাস্তায় ভয় নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। কখন গাড়ি উল্টে যায় বলা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ ও এই পথে যাতায়াতকারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির এক পাশে জলাধার, আরেক পাশে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। এর মধ্যে অনেক বাণিজ্যিক স্থাপনাই গাড়ির ওয়ার্কশপ। যে যে স্থানে ‘কারওয়াশ সেন্টার’ আছে, সেখানেই খানাখন্দ বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কারওয়াশ সেন্টারগুলো তাদের সুবিধার জন্য গাড়ি ও মোটরসাইকেল ধোয়ার পর সে পানি রাস্তায় ফেলে। এতে সড়কে পানি জমে থাকে। আবার কেউ কেউ সড়কেই শুরু করেছেন গাড়ি ধোয়ার কাজ। নিয়মিত সড়কে জমাটবদ্ধ পানি সড়কের ক্ষতি করছে। যেসব স্থানে পানি জমছে, সেখানকার বিটুমিন, পাথর উঠে গেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এ ছাড়াও বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। প্রাইভেট কারসহ পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, রিকশা নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে যায়। কোথাও কোথাও বেশি গর্ত হওয়ায় রিকশা উল্টে যায়, যাত্রীরাও মারাত্মক আহত হন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এই রাস্তায় নিয়মিত চলাচলকারী সুলতান আহমেদ নামের একজন বলেন, আমি নিয়মিত এই রাস্তায় চলাচল করি। গত সাত-আট মাস ধরে রাস্তার এই বেহাল দশা, কিন্তু দেখার কেউ নেই। আগের চেয়ে রিকশার ভাড়া বেড়েছে ২০ টাকা। এ ছাড়া এই রাস্তায় চলতেও কষ্ট হয়। প্যাডেলের রিকশা এই রাস্তায় চলতে চায় না। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে অনেক কষ্টে।
করিম মোল্লা নামের একজন রিকশাচালক বলেন, অনেক দিন ধরে রাস্তা ভাঙছে। কিন্তু নতুন করে রাস্তার কাজ হচ্ছে না। এতে যাত্রী টানতেও আগের চেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তাই আমরা একটু বেশি ভাড়া চাই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার খানাখন্দে পানি জমে আছে। যে কারণে চালকরা দেখে বুঝতে পারছেন না এসব গর্তের গভীরতা কতটুকু। রিকশা থেকে শুরু করে অন্য যানবাহনগুলো খুব ধীরগতিতে চলাচল করছে। ওই সড়কে রিকশা চালান আল আমিন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু পাশের এলাকাতেই রিকশার গ্যারেজ, তাই বাধ্য হয়ে এ ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশা চালাতে হয়। তবে এখন বেশির ভাগ চালকই এ রাস্তায় ট্রিপ পেলেও যাত্রী নেন না। প্রতিদিন আমি রিকশা উল্টে যেতে দেখি এবং নিজেও যাত্রী নিয়ে দুবার উল্টে পড়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির এ রকম নাজুক অবস্থা। কেউ এটি ঠিক করেন না।