চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) অলস পড়ে আছে আধুনিক পদ্ধতির সড়ক পরিষ্কারের যন্ত্র ‘রোড সুইপার’ এবং ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারক যন্ত্র ‘উইড হারভেস্টার’ মেশিন। মোটেও ব্যবহার হয়নি যন্ত্রগুলো। অপরিকল্পিতভাবে যন্ত্রপাতিগুলো ক্রয় করায় সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কচুরিপানা ও ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য প্রায় ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ‘উইড হারভেস্টার’ যন্ত্রটি কেনা হয়। ২০২৫ সালের মার্চে যন্ত্রটি চসিকের সাগরিকা ওয়ার্কশপে রেখে যায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যন্ত্রটি ওভাবেই পড়ে আছে। গত প্রায় তিন বছর আগে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ কারণে যন্ত্রটি নিতে অনাগ্রহ দেখায় চসিক। তবে চাহিদা না থাকলেও যন্ত্রটি চসিককে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। চসিক এখন যন্ত্রটি কী করবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে।
২০২২ সালে ‘সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক খাতের বরাদ্দ দিয়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি উইড হারভেস্টার কিনেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে এগুলো দেশের ৮টি সিটি করপোরেশনকে একটি করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে সড়কের ধুলোবালি পরিষ্কারের জন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতালি থেকে ২০টি রোড সুইপার ট্রাক কিনেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। দেশের ১০টি সিটি করপোরেশনকে এসব রোড সুইপার দেওয়া হয়। এর মধ্যে চসিককে দেওয়া হয় তিনটি। তবে এগুলো সড়কের ধুলাবালি পরিষ্কারের বদলে উল্টো সড়কে আরও ধুলা ওড়ায়। কোনো কাজে না আসায় এগুলোর ব্যবহার বন্ধ রাখে চসিক। বর্তমানে গাড়িগুলো চসিকের সাগরিকা ওয়ার্কশপে পড়ে আছে। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর জিইসি মোড় ও দেওয়ানহাট মোড়ে আধুনিক এ সুইপিং ট্রাকের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা বলেন, যন্ত্রটি জলাশয়ের কচুরিপানাসহ ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের উপযোগী। কাপ্তাই হ্রদ বা মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কার্যকর করতে জলাশয়ের গভীরতা অন্তত সাত ফুট এবং প্রশস্ততায়ও যথেষ্ট বড় হতে হয়। কিন্তু নগরের খালগুলোর গভীরতা কম। এগুলোতে নামানোর মতো অবস্থাও নেই। ফলে চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোর জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যান্ত্রিক বিভাগে এমন অনেক যন্ত্রপাতি আছে। জানি না, আগামীতে নিলামে বিক্রি করে দিতে হয় কি না। চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জসিম উদ্দিন বলেন, রোড সুইপার যন্ত্রটি পরিবেশ এবং সড়কের অবস্থান মূল্যায়নে আমাদের মতো শহরে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। ফলে এগুলো এখন সাগরিকার স্টোরে পড়ে আছে। তাছাড়া ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারক যন্ত্র ‘ইউড হারভেস্টার’ মেশিনও আমাদের প্রয়োজন ছিল না। সার্বিক বিবেচনায় এটি এখানে ব্যবহারের উপযোগীও নয়।
জানা যায়, রোড সুইপার ট্রাকগুলো ইতালি থেকে আনা। এগুলো আকারে বেশ বড়। একটি ট্রাক দিয়ে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করা সম্ভব। এই ট্রাকগুলো রাস্তা থেকে ধুলাবালি তুলে নেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী পাইপ ব্যবহার করে। এ ছাড়া ট্রাকগুলোতে যুক্ত পানির ট্যাংক দিয়ে রাস্তা ধৌত করা যায়। এই রোড সুইপার ট্রাকগুলো চসিকের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করেছে। ২০ জন কর্মীর কাজ একটি ট্রাক দিয়ে করা সম্ভব; যা জনবল এবং সময় সাশ্রয় করে।