ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি। রুকনুজ্জামান কাঞ্চন আর মতিউর মুন্নার গোলে ভারতকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। ২২ বছর আগের সেই স্মৃতিই ফিরে এলো ঢাকা স্টেডিয়ামে। হামজা-সামিত-জায়ান-রাকিব-মোরসালিনদের নিয়ে গড়া তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর বাংলাদেশ এনে দিল জয়। ভারতের বিপক্ষে জয়। যে জয়ের আশায় কত দিন আর রাত কাটিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। অবশেষে সেই জয় ধরা দিল ঢাকা স্টেডিয়ামেই। এ জয়ে উন্মাতাল গ্যালারির দর্শক। সঙ্গে পুরো দেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীও।
ম্যাচ শুরু হওয়ার তখনো অনেক বাকি। রাত ৮টায়। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার আগেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের চারপাশ লোকারণ্য। নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া শাসন প্রতিটি প্রবেশ পথে। কয়েক লাইনে দর্শকরা প্রবেশ করছেন স্টেডিয়ামে। দল বেঁধে ফুটবল খেলা দেখতে আসা তরুণদের কণ্ঠে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগান। কারও হাতে ঢাকঢোল। প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে কয়েক ঘণ্টা আগেই আসন গ্রহণ করলেন হাজার হাজার দর্শক। হামজাদের ম্যাচপূর্ব ওয়ার্ম-আপের আগেই কানায়-কানায় পূর্ণ গ্যালারি। বাংলাদেশের ফুটবলাররা ম্যাচের আগে গা গরম করতে মাঠে নামতেই সেই গ্যালারি থেকে মহাসমুদ্রের গর্জন উঠল। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ আর ‘হামজা, হামজা’ স্লোগানে মুখরিত হলো ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের আকাশ।
প্রতিপক্ষের নাম ভারত। প্রতিবেশী এ দেশটিকে যে কোনো খেলাতে পেলেই বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনায় খেলতে নামে বাংলাদেশ। ক্রিকেটে মাঝেমধ্যেই ভারতকে পরাজিত করার গৌরব বয়ে আনেন টাইগাররা। তবে ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতি নতুন প্রজন্মের নেই। পুরোনো ফুটবলপ্রেমীদেরও স্মৃতির পাতা ধূসর হয়ে গেছে। ২২ বছর আগেই সেই স্মৃতি কতজনেরই বা মনে ছিল! এবার ধূসর সেই স্মৃতির পাতাই রঙিন হয়ে উঠল। রাকিব-মোরসালিনের ম্যাজিক্যাল মুহূর্ত এনে দেয় দারুণ এক গোল। ম্যাচের ১২ মিনিটের সেই গোলটাই জয় উপহার দেয় বাংলাদেশকে।
দীর্ঘ ২২ বছরের আক্ষেপ দূর হলো বাংলাদেশের। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে। রুকনুজ্জামান কাঞ্চন ও মতিউর মুন্নার গোলে সেই জয়টাই শেষ। এরপর ফুটবল নিয়ে দুই দল আরও ১০ বার লড়াইয়ে নেমেছে। এর মধ্যে ভারত জয় পেয়েছে বেশ কয়েকবার। ড্র করেছে দুই দল। তবে বাংলাদেশের জয় ছিল না। দীর্ঘদিনের আক্ষেপটা শেষ পর্যন্ত দূর করল বাংলাদেশ!
কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের গাঁটছড়া ২০২২ সাল থেকে। প্রায় চার বছরে দারুণ একটা রেকর্ড গড়েছেন কাবরেরা। তার অধীনেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে। কাবরেরার অধীনে ৩৬ ম্যাচ খেলে ১০টিতে জয় ও ৯টিতে ড্র করেছে। হেরেছে ১৭টিতে। ১০টির বেশি ম্যাচে কোচিং করিয়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সফলতা উপহার দিয়েছেন সামির শাকির। তার অধীনে ১২ ম্যাচে ৬টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সফলতার হার ৫০ শতাংশ। জর্জ কোটান আর আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানিরাও বাংলাদেশকে ৬টি করে ম্যাচে জয় উপহার দিয়েছেন। এতদিন এ সংখ্যায় জেমি ডে ও হাভিয়ের কাবরেরা ছিলেন সমান্তরালে। জেমি ডের অধীনেও বাংলাদেশ ৯ ম্যাচ জয় করে। অবশ্য তার অধীনে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলে ২৯টি। এবার ৩৬ ম্যাচে ১০ জয়ে জেমিকে ছাড়িয়ে গেলেন কাবরেরা। এবার কি তার চুক্তির মেয়াদটাও বাড়িয়ে দেবে বাফুফে! ভারতের বিপক্ষে জয়ে কি তার শাপমোচন হয়ে গেল!