শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, জাভেদ মিয়াদাদ, রিকি পন্টিং, কুমার সাঙ্গাকারাদের নিয়ে শত শত গল্প রয়েছে। বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন হাজারো তরুণ ক্রিকেটার। প্রতিভার বিচারে টেন্ডুলকার, লারা, সাঙ্গাকারাদের কাতারে নন, তার পরও মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। বিশ্বের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটারদের একজন। তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা নিয়ে অনায়াসে লেখা যায় শত গল্প। যে গল্প পড়ে জীবনে কিশোররা সাফল্য পাবেন অনায়াসে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অলিখিত ‘রাজা’ যদি হন সাকিব আল হাসান। তাহলে ‘যুবরাজ’ মুশফিক। ‘রাজপুত্র’ মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল। রাজা, যুবরাজ ও রাজপুত্রদের ভিড়ে মুশফিক নিজেকে ঠাঁই দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। যে উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন এ দেশের কোনো ক্রিকেটার কখনো দেখেননি, দেখার সাহস পাননি। শুধু তাই নয়, দেখতে ভয়ও পেতেন। প্রতিভায় পিছিয়ে থাকলেও কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও একাগ্রতায় এভারেস্ট উচ্চতায় উঠেছেন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আজ অনন্য এক ইতিহাস লিখবেন মুশফিক। ক্রিকেটের প্রতি শতভাগ আবেগ, ভালোবাসা, মমত্ববোধের অসাধারণ মিশেলে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলতে নামবেন। যা এক সময় ছিল কল্পনাতীত এবং স্বপ্নের। আজ সেটা সত্যি এবং বাস্তব।
১৮৭৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটের শুরু। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে যা ২৬০৬ নম্বর টেস্ট। প্রায় দেড় শ বছরে এখন পর্যন্ত ৮৩ জন ক্রিকেটার ক্যারিয়ারে ১০০ বা তার ওপরে টেস্ট খেলেছেন। ভারতের টেন্ডুলকার একমাত্র ২০০ টেস্ট খেলার বিরলতম রেকর্ডের মালিক। মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৮৪ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট ক্লাবে নাম লিখবেন। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন। ক্যারিয়ারে প্রথম ১০০ টেস্ট ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কলিন কাউড্রে। খেলেন ১৯৬৮ সালে। সর্বশেষ ক্লাবে নাম লিখেছেন শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুণারত্নে। মুশফিক ১০০তম ক্রিকেটার হিসেবে আজ মাঠে নামবেন। লিখবেন ইতিহাস টাইগার কোচ ফিল সিমন্স গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মুশফিককে জীবন্ত কিংবদন্তি বলেছেন, ‘মুশফিক অবশ্যই একজন কিংবদন্তি। আমার মনে হয় না, খুব বেশি খেলোয়াড় আছেন যারা টেস্ট ক্রিকেটে তার করা ডাবল সেঞ্চুরির (৩টি) সংখ্যায় পৌঁছেছেন। তিনি বহু বছর ধরে পারফর্ম করেছেন। কী বলব, ২০ বছর? সুতরাং তাকে কিংবদন্তি হতেই হবে। কারণ, এই দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং পারফরম্যান্স তাকে সেই অবস্থানে নিয়ে গেছে।’

মুশফিকের বয়স এখন ৩৮ পেরিয়ে ৩৯ ছুঁইছুঁই। ২০ বছর আগে ২০০৫ সালে লর্ডসে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। ১৮ বছর বয়সে হঠাৎ অভিষেক তার। খালেদ মাসুদ পাইলট থাকার পরও দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। লর্ডসের ইতিহাসে মুশফিক সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলেছেন। তিনি প্রতিদিনই টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন রেকর্ড গড়ছেন। সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯তম টেস্ট খেলেছেন। তার রান ১২ সেঞ্চুরি ও ২৭ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৩৫১ রান করেন। যা দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। দেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিটিও তার। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন। এ ছাড়া ২১৯* ও ২০৩* জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দুটিই আবার মিরপুরে। তাহলে...
২০০৫ সালে অভিষেক। এরপর ২০ বছর ধরে দেশকে একই ধারাবাহিকতায় সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন।
মুশফিক শুধু টেস্ট নয়, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। এখন শুধু টেস্ট খেলছেন। ফিটনেস ধরে রেখেছেন। এক সময়কার সতীর্থ জাবেদ ওমর বেলিম গুল্লু বলেন, ‘মুশফিক একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার।’ জাতীয় দলের আরেক সাবেক ওপেনার নাফিস ইকবাল বলেন, ‘ভীষণ গোছানো একজন ক্রিকেটার মুশফিক।’
ড্রেসিং রুমে ঢুকলেই বোঝা যায়, মুশফিকের চেয়ার কোনটা। সবগুলো জিনিস গুছিয়ে রাখা।’
একসময়কার সতীর্থরা মুশফিকের ১০০ টেস্ট খেলায় আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। সবকিছুকে ছাপিয়ে একটা বিষয় এখন আলোচনায়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের যুবরাজ ১০০ টেস্ট খেলার বিরল ইতিহাস লিখতে যাচ্ছেন। যা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে সোনালি ফ্রেমে বাঁধাই থাকবে।