তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীন–জাপান কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর মধ্যেই জাপানমুখী প্রায় পাঁচ লাখ ফ্লাইট টিকিট বাতিল করেছে বেইজিং। এর আগে চীন জাপানের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত করে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিও বন্ধ করে দেয়।
জাপানের অবস্থানকে কেন্দ্র করে তাইওয়ান ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে তীব্র টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। সেই উত্তেজনার জেরেই ব্যাপক হারে ফ্লাইট টিকিট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি গত ৭ নভেম্বর পার্লামেন্টের এক ভাষণে বলেন, চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণের চেষ্টা করে তবে জাপান সামরিকভাবে জড়িত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তার এই মন্তব্যে চীনা সরকার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং চীনা ভ্রমণকারী ও শিক্ষার্থীদের জাপানে না যাওয়ার সতর্কতা জারি করে। কমপক্ষে সাতটি চীনা এয়ারলাইন্স ঘোষণা করেছে যে, তারা জাপানে বুক করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ভ্রমণকারীদের বিনা খরচে বাতিলের সুযোগ দেবে। এর মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রীয় সংস্থাও রয়েছে। একজন বিমান ভ্রমণ বিশ্লেষক হানমিং লি বলেছেন, যাত্রাসংক্রান্ত তথ্য ইঙ্গিত করে- ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে জাপানগামী প্রায় ৫ লাখ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
চীনা গণমাধ্যম জিমু নিউজ জানিয়েছে, সিচুয়ান এয়ারলাইন্স জানুয়ারি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত চেংদু এবং সাপ্পোরোর মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাজেট ক্যারিয়ার স্প্রিং এয়ারলাইন্স একাধিক জাপান ফ্লাইট বাতিল করেছে। চীন জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটক উৎস এবং গত বছরের হিসাবে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার চীনা শিক্ষার্থী জাপানে পড়াশোনা করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সোমবার জাপানের খুচরা ও ভ্রমণ খাতের কম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্য হ্রাস পায়। হানমিং লি গার্ডিয়ানকে বলেন, কোভিড মহামারির শুরুর দিকের পর তিনি এ ধরনের সবচেয়ে বড় ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা দেখছেন। তবে এর ফলে চীনের অভ্যন্তরীণ বিমান শিল্পে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি বলেন, এটি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য বড় ক্ষতি নয়, কারণ চীন-জাপান বাজারটি পুরো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় খুবই ছোট। এই ভ্রমণ বাতিলগুলো একগুচ্ছ অর্থনৈতিক পালটা ব্যবস্থার অংশ। এদিকে, মঙ্গলবার জাপান চীন সফররত নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে জনসমাগমপূর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জাপানের প্রধান কেবিনেট সচিব মিনোরু কিহারা বলেছেন, সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ঘটনাগুলো দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যা চীনা গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ায় এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/নাজিম