মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের গোষ্ঠী হামাস। গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে বিভিন্ন দায়িত্ব ও ভূমিকা দিয়ে, যার মধ্যে হামাসকে নিরস্ত্র করাও অন্তর্ভুক্ত, তাদের নিরপেক্ষতা কেড়ে নেওয়া এবং দখলদারির পক্ষে সংঘাতের একটি পক্ষ হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট হয়েছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি উপত্যকার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল বাহিনী গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সম্ভাব্য পথ তৈরির কথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ প্রস্তাবের পক্ষে ১৩ ভোট পড়ে। ওয়াশিংটন ভোটের পর একে ‘ঐতিহাসিক এবং গঠনমূলক’ বলে ঘোষণা করেছে। কোনো দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল।
কারাগারে ৯৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু : একটি ইসরায়েলি মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে, গত দুই বছরে ইসরায়েলি হেফাজতে কমপক্ষে ৯৪ ফিলিস্তিনি বন্দি মারা গেছেন। ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েলের (পিএইচআরআই) নতুন এক প্রতিবেদনে সিস্টেম্যাটিক কিলিং এবং ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলে মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল, সেই সময় থেকে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, এর আগের ১০ বছরে ইসরায়েলি হেফাজতে ৩০ জনেরও কম ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছিল।
পিএইচআরআই অভিযোগ করেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি সিকিউরিটি প্রিজনারদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগজনক চর্চা শুরু করেছে। এটি কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক নীতির অংশ হয়ে উঠেছে। তবে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা আইন মেনে এবং সরকারি নজরদারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে কাজ করে। তারা বাইরের সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান বা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেনি। আইপিএস আরও বলেছে, সমস্ত বন্দিকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে রাখা হয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা, পরিচ্ছন্নতা ও পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মানসহ তাদের অধিকার পেশাদার প্রশিক্ষিত কর্মীদের দ্বারা বজায় রাখা হয়। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীরজুড়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেড ক্রসকে বন্দিদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বন্দিশালায় প্রবেশাধিকারও সীমিত করেছে। -বিবিসি ও এএফপি
পিএইচআরআই’র প্রতিবেদনটি সরকারি রেকর্ড, ফরেনসিক প্রতিবেদন, অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং প্রত্যক্ষদর্শী, পরিবার ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে ৫২ সামরিক কারাগারে এবং ৪২ জন আইপিএস পরিচালিত বেসামরিক জেলে মারা গেছেন। পিএইচআরআই’র দাবি, এ মৃত্যুগুলোর কারণ হলো শারীরিক সহিংসতা, চিকিৎসার অবহেলা অথবা উভয়ই। প্রতিবেদনে ইসরায়েলের কট্টর-ডানপিন্থ জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। পিএইচআরআই বলেছে, বেন-গভিরের অধীনে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলের বন্দিশালাগুলো কার্যত নির্যাতন ও অপব্যবহারের স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, দৈনন্দিন শারীরিক সহিংসতা ব্যাপক এবং মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা ও পদ্ধতিগত নির্যাতনের ফলে বহু ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।