ভারতকে ফুটবলীয় লড়াইয়ে পরাজিত করার সুখস্বপ্নে বিভোর ছিল পুরো দেশ। ২০০৩ সালের পর এমন সুখস্বপ্ন কতবার দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। কলকাতার সল্ট লেকে ভারতের বিপক্ষে ২০১৯ সালে জয়ের পাশ থেকে ঘুরে এলেও ড্রতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ২০২১ সাল মালদ্বীপেও জয়বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। গত মার্চে ভারতের মাটিতে খেলতে গিয়ে গোলশূন্য ড্র করে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের খেলাতেই মুগ্ধ হয়েছিল দর্শকরা। বারবার জয়বঞ্চিত হলেও আশা ছাড়েননি সমর্থকরা। আশা ছাড়েনি ফুটবলাররাও। অবশেষে কাক্সিক্ষত সেই জয় ধরা দিল। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারত বধের নায়ক বনে গেলেন তরুণ তারকা শেখ মোরসালিন। তার গোলেই ১-০ ব্যবধানে জয়ের গৌরব নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। ২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেল বাংলাদেশ।
ম্যাচের ১২তম মিনিটেই ম্যাজিক্যাল মুহূর্তটি ধরা দেয়। বাংলাদেশের ডি-বক্সের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন ভারতীয় ফুটবলাররা। হঠাৎ করেই মোরসালিনের পাসে বল পেয়ে ভারতীয় ডিফেন্স লাইনকে পেছনে ফেলে মাঝ মাঠ থেকে ভারতীয় ডি-বক্সে ছুটে যান রাকিব। ডি-বক্সের বাম দিক থেকে ক্রস বাড়ান মোরসালিনের উদ্দেশে। গোলরক্ষক বলের লাইনে এসে গোল বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে মোরসালিনের শটে কোনো সুযোগ পাননি। বল জালে জড়িয়েই মহা-উল্লাসে মেতে ওঠেন মোরসালিন। রাকিব-মোরসালিনের ফুটবল প্রদর্শনী মন জুড়িয়ে দেয় দর্শকদের। গ্যালারির গর্জনে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে গোলের সুখবর।
অবশ্য এরপরও ঘটনার কমতি ছিল না। ২৭ মিনিটে তারিক কাজী আঘাত পেয়ে মাঠে চিকিৎসা নেওয়ার পর মাঠ ছাড়েন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন শাকিল তপু। ৩১ মিনিটে ভারতের লাল্লিয়ানজুয়ালা চাঙতে গোলবার ফাঁকা পেয়ে শট নেন। মিতুল মারমা পোস্ট থেকে তখন বেশ দূরে। গোলপোস্ট অক্ষত দেখে ছুটে আসেন হামজা। চাঙতের শট বুঝে বলের লাইনে এসে জুঁঁতসই এক হেডে গোল বাঁচিয়ে দেন তিনি। বাংলাদেশের দর্শকরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয় দুই দলের ফুটবলারের লড়াকু মনোভাব। ৩৪ মিনিটে তপুর সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলারের ধাক্কাধাক্কি শেষ পর্যন্ত দলগত কোন্দলের রূপ নেয়। তবে হামজারা ছুটে এসে দ্রুতই পরিস্থিতি সামলে নেন। প্রথমার্র্ধ শেষ করার আগে আরও একটা সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ৪৪ মিনিটে সাদের ক্রসে বল পেয়ে হেড করেন মোরসালিন। ডি-বক্সের কয়েক গজ বাইরে বলটা পেয়েই বাম পায়ে জোরালো শট নেন হামজা। তবে গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে বল চলে যায় মাঠের বাইরে।
প্রথমার্ধে হামজার দক্ষতায় গোল থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেও ভারত বেশ চাপ তৈরি করে। কয়েকটা গোলের সুযোগও তৈরি করে তারা। ভাগ্যগুণে এ আক্রমণগুলো থেকেও বেঁচে যান তপু-মিতুলরা। বিশেষ করে হামজা ডিফেন্সে নেমে খেলতে শুরু করেন। ভারতীয়দের আক্রমণগুলো হামজাদের দেয়ালে বারবারই ঠেকে যায়। শেষদিকে বাংলাদেশও গোলের সুযোগ তৈরি করে। শাকিল তপুর শটটা ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীতের হাত ফসকে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল বাঁচান গুরপ্রীত। ৮২ মিনিটে ভারতীয় অধিনায়ক সন্দেশ ঝিংগান ডি-বক্সে হ্যান্ডবল করলে বাংলাদেশের ফুটবলাররা পেনাল্টির আবেদন জানান। তবে ফিলিপাইনের রেফারি ক্লিফোর্ড তাতে কর্ণপাত করেননি। এরপর দুই দলই গোলের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে খেলে। মিতুল মারমা আগের ম্যাচগুলোর মতো আর ভুল করেননি। গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবারই বল লুফে নিয়ে গোল বাঁচান তিনি।