সিলেটের ঐতিহ্যের স্মারক কিনব্রিজ। সুরমার দুই পাড়ের মেলবন্ধন তৈরি করেছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লোহার স্ট্রাকচারের সেতুটি।
ঝুঁকি বিবেচনায় গেল কয়েক বছরে এই ব্রিজ দিয়ে যানচলাচল বন্ধ। পদচারী ব্রিজটি দিয়ে কেবল চলে মোটরসাইকেল। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ হকারদের কারণে পদচারী ব্রিজটি দিয়ে সুরমা নদী পার হতে গিয়ে হোঁচট খেতে হতো পথচারীদের। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ হয়েছে হকার। আর সেই সঙ্গে নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্যের কিনব্রিজ। ২০১৯ সাল থেকে কয়েক দফায় কিনব্রিজ দিয়ে যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বারবার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালের শুরুতে শতবর্ষী সেতুটি সংস্কার করা হয়। এ সময় বন্ধ রাখা হয় যানবাহন ও মানুষের চলাচল। সংস্কার শেষে পায়ে হেঁটে পারাপারের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হলেও বন্ধ করা হয় যানচলাচল। এরপর ধীরে ধীরে ফাঁকা সেতুটির দখল নেয় হকাররা। পুরো ব্রিজ পরিণত হয় ভ্রাম্যমাণ হাটে। সিটি করপোরেশন ও পুলিশ বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ফের হকাররা এসে বসতেন সেতুটিতে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সারওয়ার আলম জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর কিনব্রিজকে হকারমুক্ত করার ঘোষণা দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হকারমুক্ত করা হয় কিনব্রিজ। ১৩ সেপ্টেম্বর ওই অভিযানের পর নগরবাসীর আশঙ্কা, কিনব্রিজ ফের হকারদের দখলে চলে যেতে পারে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোরতায় সেই সুযোগ পায়নি হকাররা।
হকার উচ্ছেদের পর নতুন রূপ পেয়েছে কিনব্রিজ। স্বস্তি ফিরেছে সেতু দিয়ে নদী পারাপারে। এতে খুশি নগরবাসী। তারা মনে করেন, প্রশাসনের নজরদারি থাকলে ঐতিহ্যের সেতুটি আর জঞ্জালে পরিণত হবে না। সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলীর বাসিন্দা শোয়েব আহমদ বলেন, ‘বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে কিনব্রিজ। ব্রিজটি আমাদের সিলেটের ঐতিহ্য ও গৌরবের স্মারক। তাই প্রশাসন ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শুধু পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন সুরমা নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তাই এটি সব সময় হকার ও জঞ্জালমুক্ত থাকা উচিত। প্রশাসনের কঠোরতায় সেতুটি এখন যেভাবে হকারমুক্ত, সব সময় এটি যেন সেভাবেই থাকে- এমন প্রত্যাশা আমাদের।’ জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, কিনব্রিজ নয়, হকারদের থাকবে নির্ধারিত স্থান। হকার পুনর্বাসনে প্রস্তুত করা হচ্ছে অস্থায়ী মার্কেট। সেখানেই তারা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে ব্যবসা করতে পারবেন।