সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম)।
বুধবার নগরীর কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় অবস্থিত আরামিট গ্রুপের অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একই মামলায় জাবেদের দেশীয় সম্পদ দেখাশোনায় নিয়োজিত আরামিট পিএলসি’র এজিএম উৎপল পাল ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে দুদক। আদালতের মঞ্জুর করা ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের দুজনের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে জাবেদের পারিবারিক গাড়িচালকের বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার সম্পদের ২৩ বস্তা নথি জব্দ করে দুদক। ২১ সেপ্টেম্বর জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
দুদকের পিপি অ্যাডভোটকেট মোকাররম হোসাইন জানান, আরামিট পিএলসির ১১টি চেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া উত্তোলন করা হয়েছিল। চেকের মুড়ি ও প্রমাণপত্রসহ আরামিট অফিস থেকে এজিএম জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ইউসিবিএল ব্যাংকের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলার আসামি।
দুদক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৪ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুখমিলা জামান, তার ভাইবোন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারিসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। সেগুলো হলো- ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় হিসাব খুলে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইমলোন অনুমোদন করানো হয়। ব্যাংকের নিজস্ব ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ওই ঋণ অনুমোদন দেয়। এরপর সেই টাকা ভাগ করে একই ব্যাংকের চারটি হিসাব নম্বরে স্থানান্তর ও পরে নগদে উত্তোলন করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, টাকা স্থানান্তর করা এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আরামিট গ্রুপের কর্মচারী। নগদ উত্তোলনের পর আরামিট গ্রুপের হিসাবগুলোতে পে-অর্ডার ও ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের এমপি ছিলেন। ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ কেনার অভিযোগ উঠার পর থেকে দুদকসহ একাধিক সংস্থা তদন্তে নেমেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর তিনি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ