বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)-এর নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রকিব হোসেন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) তিনি বলেন, “ঘটনার বিস্তারিত জানতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও আদালত ২৪ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জালিয়াতচক্রের মূলহোতাসহ জড়িতদের নামও দিয়েছে তারা। বর্তমানে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।”
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার দুইজনের সঙ্গে আসা আরও দুজন ও পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে গত ২ নভেম্বর আরডিএ’র উপপরিচালক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন বাদী হয়ে শেরপুর থানায় মামলা করেন। ওইদিন সকালে দুই চাকরিপ্রার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন— বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের সাতবেকি গ্রামের জাহিদ হোসেনের ছেলে জিহান আফ্রিদি ব্রাইট (২২) এবং বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের মোছা. শাপলা বেগম (২৯), যিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিমু মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন।
গত ১ নভেম্বর আরডিএ’র অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষাতেই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আরডিএর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর অফিস সহায়ক পদে ৫,২৭০ জন এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৫,৮১৯ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে দুই পদে মোট ২,২৮৭ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১২৪ জন।
পরে একইদিন বিকেলে আরডিএ মহাপরিচালকের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে জিহান আফ্রিদি ও শাপলা বেগমের আচরণ সন্দেহজনক হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। লিখিত খাতার হাতের লেখার সঙ্গে তাদের লেখা না মেলায় দুজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপরই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ও আরও দুইজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তবে মামলায় অজ্ঞাত কারণে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ওই তিনজনই এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।
শেরপুর থানার ওসি এস. এম. মঈনুদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত—তাদের কেউই রেহাই পাবে না।”
আরডিএ মহাপরিচালক ড. এ. কে. এম. অলি উল্ল্যা বলেন, “মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া দুই প্রার্থীকে আমরা পুলিশে দিয়েছি। ঘটনাটির সঙ্গে যারা জড়িত থাকুক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
বিডি প্রতিদিন/হিমেল