গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে রাজনীতিতে ফের সংকট দেখা দিয়েছে। বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই জুলাই সনদ বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর জামায়াত বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয়। গত কয়েক দিনে গণভোট এবং জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা তির্যক ভাষায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে নানা রকম আলটিমেটাম ও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। তারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানাচ্ছেন। এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দলগুলোকে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয় সরকার। আগামীকাল শেষ হচ্ছে সময়। কিন্তু দলগুলোতে আলোচনাই হয়নি। সমস্যা সমাধানে বিকল্প পথ খুঁজছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে। নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর অন্যথা হলে বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই তা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল জোট গড়ে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে, তারা বলছে নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। আমরা বলছি, গণভোট নির্বাচনের দিনই হতে হবে।’ জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের শুক্রবার দলীয় এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সরকারের উদ্দেশে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নতুবা জনগণ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় আবার রাজপথে নেমে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি শুরু থেকেই বলছে বর্তমান বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই। আবার জাতীয় নির্বাচন পেছালে দেশে সংকট আরও বাড়বে। আর আলাদাভাবে গণভোটের আয়োজনও ব্যয়বহুল। এজন্য তারা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, এতে দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য সংস্কার সংলাপে সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে ওই প্রস্তাবের ওপর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে দলটি। সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৯টি প্রস্তাবে তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া হলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার সিদ্ধান্তও জানিয়েছে বিএনপি। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির দাবিতে অনড় রয়েছে। সংলাপ চলাকালে সম্মত হলেও এখন জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানতে রাজি নয় তারা।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সমঝোতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সাত দিন সময় শেষ হবে আগামীকাল সোমবার। গতকাল পর্যন্ত সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বিএনপি দলের স্থায়ী কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, কেবল সরকার উদ্যোগ নিলে আলোচনায় বসবে বিএনপি। একই সঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বৈঠকে সরকারের সমালোচনাও করেছেন নেতারা। এদিকে আলোচনার জন্য টেলিফোন করে বিএনপির সাড়া না পাওয়া জামায়াত আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা রাজপথে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি আদায়ের কথা বলেছে। তবে বিএনপি রাজপথে পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে। অনেকটা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এর পর্যায়ে। বিএনপি বলছে, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, নির্বাচনের আগে গণভোট দিতেই হবে। সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করব। এজন্য ১১ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটাম, না মানলে ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে। সংস্কারসহ জুলাই সনদের বিষয়ে বিএনপি বলছে, ১৭ অক্টোবর সংস্কার নিয়ে আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে সনদে সই করেছি, সেসব বিষয় সামনে রেখে আমাদের পথ চলতে হবে। ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে ঐকমত্য কমিশন শুধু মিটিং আর খাওয়াদাওয়াই করল। আর এখন সরকার বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দেওয়া হলো, মতবিরোধ নিরসন করতে। বিএনপিকে কি আপনাদের খেলনা মনে হয়?
জামায়াত বলছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। বিএনপিসহ যেসব দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে সেটি ছাড়াই ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত সুপারিশের ওপর গণভোট দিতে হবে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা কয়েক দিন থেকে বিএনপিকে উদ্দেশ করে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। যার সারমর্ম হলো- জনগণের স্বার্থে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে চায় না। বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে সরাসরি না বলতে পেরে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। মূলত ক্ষমতায় গেলে তারা এসব বাস্তবায়ন করবে না। এজন্য জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবায়ন করতে মরিয়া। এ দাবির সপক্ষে জামায়াত ইতোমধ্যে সমমনা আরও ৮টি দলকে তাদের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তারা রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১১ নভেম্বরের আগে সরকারকে দাবি মেনে নিতে হবে। তা না হলে দাবি আদায়ে মহাসমাবেশ হবে এবং ওই দিন ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো জোট বা সমঝোতা না হলেও তারা নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেখতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতের এরকম মুখোমুখি অবস্থানকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মোটেই সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখতে নারাজ। তারা মনে করে, জুলাই বিপ্লবের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে যদি কোনো কারণে এই আন্দোলন মাঠে গড়ায় সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল থেকে খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। এমনকি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে ফের সংশয় দেখা দেবে। এ ছাড়া সমঝোতার মেয়াদ সাত দিন পার হওয়ার পর সরকার যদি একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাতেও সংকট দূর হবে বলে মনে হয় না। মূলত এখানে সরকারেরই ভূমিকা রাখা দরকার ছিল। অহেতুক গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ নির্বাচনমুখী সব দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা।
এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দলগুলোকে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও সমাধানের পথও খুঁজছে সরকার। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে একাধিক বিকল্প বিবেচনায় রেখেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে বিএনপির দাবি অনুযায়ী একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট এবং জামায়াত ও এনসিপির দাবি অনুযায়ী ভোটের সংখ্যানুপাতে (পিআর পদ্ধতি) সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনাও হয়েছে। তবে দলগুলো এখনো তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কোনো একটি পক্ষকে এককভাবে সন্তুষ্ট করতে গেলে অন্য পক্ষে অসন্তোষ বাড়বে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। এ বাস্তবতায় সরকার এমন এক সমাধানের পথ খুঁজছে, যাতে তিন দলের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে।
আগের অবস্থানেই দলগুলো : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘গণভোটের বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই।’ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিএনপি আমাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।’ অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম আবারও জানিয়েছেন, দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জনতার ইশতেহার’ শীর্ষক সংলাপে তাঁরা এসব কথা বলেন। ট্রেইস কনসালটিং লিমিটেড আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের প্রতিনিধিরা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, টেবিলে বসে ঝগড়া করে দেশের ভাগ্য ঠিক করা যায় না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভাবনা ও রূপরেখা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হবে। আর যেগুলো হয়নি, তা জনগণ ঠিক করবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তার বাইরে গিয়ে নতুন ইস্যু সৃষ্টির মানে শ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে না। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ঐকমত্য হতে হবে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদে পাস করার আগে গণভোটের বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই।’
আমীর খসরু বলেন, ‘জোর করে কোনো নীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। ঢাকায় বসে কিছু দলের সিদ্ধান্তে দেশ চলতে পারে না। জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের রায় নিতে হবে। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে সব রক্ত, সব ত্যাগ বৃথা যাবে। গণতন্ত্র মানে নির্বাচন ও সংশোধনের প্রক্রিয়া, এটাই একমাত্র সঠিক পথ।’ সংসদে পাস করার আগে গণভোটের বিধান সংবিধানে নেই উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আজ যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, এ সরকার বর্তমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছে। বর্তমান সংবিধান মাথায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। এ সংবিধানে গণভোটের কিছু নেই। জাতীয় সংসদে পাস করার আগে গণভোটের বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপনাকে যদি গণভোট করতে হয়, আপনি বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের অনুসারে আপনাকে আগামী দিনে যেসব দলের ইচ্ছা রূপরেখা থাকতে পারে, প্রস্তাব থাকতে পারে, তাদের জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে এসে পাস করার পরে সে বিষয়গুলো গণভোটে যেতে পারে।’
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বিএনপি রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। আযাদ বলেন, ‘গণভোট নিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো চাপ নয় বরং জনগণের কাছে গিয়ে আমাদের কণ্ঠ তুলে ধরছি। পাশাপাশি আমরা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। উনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তারা সাড়া দেবেন না।’
আহ্বান প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘বিগত রেজিমও কিন্তু একই সুরে কথা বলত। ওই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে। তারা আমাদের ডাকলে আমরা অবশ্যই আলোচনায় যাব। আমরা যে কোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছি।’
নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ফোকাস থাকে দল, প্রার্থীকেন্দ্রিক। আমাদের দেশে ভোট কেন্দ্র দখল হয়। দুটো ভোট দিতে গেলে টাইম ম্যানেজমেন্ট হবে না, ভোট কাস্টিং কম হবে। পরে আবার বলবে, জনগণ জুলাই চার্টারের পক্ষে রায় দেয় নাই।
এই জামায়াত নেতার মতে, গণভোট আলাদা দিনে হলে জনগণ বিষয়টি গভীরভাবে বুঝতে পারবে এবং সংস্কারগুলোর প্রতি জনআস্থা আরও দৃঢ় হবে। এতে জুলাই সনদের মূল লক্ষ্য, একটি নতুন, গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ গঠন বাস্তব রূপ পাবে।
রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বা গণভোট নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার নিজের দায়িত্ব অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-সংকোচ থাকা উচিত নয়। নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাই দিনরাত কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রেস সচিব বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এখনো জুলাই গণ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে এখন সবার স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি।
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক বিভক্তি প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘শাসনব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। সারা বিশ্বে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত বিতর্কে সময় লাগে, কখনো তা দশক ধরেও চলে। নেপালে এমন সংস্কার করতে ৯ বছর লেগেছে। রাতারাতি কোনো সমাধান চাপিয়ে দেওয়া যায় না। মানুষ সুশাসন চায়। কিন্তু সেটি এক দিনে আলোচনা করেই হয় না। নির্বাচনের পর আবারও সংলাপ হতে পারে। আমরা এখন একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখছি। এখন ডান, বাম ও মধ্যপন্থি সব পক্ষের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক সমাধান প্রয়োজন।’
প্রেস সচিব বলেন, অনেকে বলার চেষ্টা করছেন যে, জুলাই সনদে নারী-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব নেই। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো কি সব শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিত্ব করে না? সব কিছুই সনদে আছে।