জুলাই আন্দোলন চলাকালে সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেছেন, আগুন দেওয়ার নির্দেশ শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন। কিন্তু উনি যা যা পোড়াতে বলেছিলেন, সেগুলো না পুড়িয়ে সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। মূলত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতেই এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ফোনালাপের অডিও রেকর্ডের বরাত দিয়ে মিজানুল ইসলাম এ কথা জানান।
এদিন জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৫৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মিজানুল ইসলাম সেতু ভবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, '(তাপসের সঙ্গে) ফোনালাপে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, যা যা পোড়াতে। ওরা পুড়িয়ে দিল সেতু ভবন। তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ উনিই দিয়েছেন। কিন্তু উনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে।'
শেখ হাসিনা ও তাপসের ফোনালাপের রেকর্ড ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়।
হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে হাসিনার ফোনালাপ
৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ফোনালাপে হাসানুল হক ইনু শেখ হাসিনাকে বলেন, 'আপনার ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি একটু দয়া করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন সবাইকে। তাহলে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।'
এসময় শেখ হাসিনা ইনুর কথায় সম্মতি দিয়ে বলেন, 'আমরা রণক্ষেত্রের সাথী।'
এরপর ইন্টারনেট চালুর কথা জানালে জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'কীভাবে ইন্টারনেট চালু করবো? ওরা ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেট আমি আর চালু করতে পারবো না। অন্য সরকার এসে করলে চালু করবে।'
ইনু তখন বলেন, 'বাংলাদেশে আর অন্য সরকার আসবে না।' জামায়াত-শিবিরকে ধরার পরামর্শ দিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, 'জামায়াত-শিবির আবারও এক্সপোজ হইছে। এই সুযোগে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন।'
ইনু পরামর্শ দেন, শিবিরের তালিকা করে সবগুলোকে ধরে ফেলতে। তাতে সায় দেন শেখ হাসিনা। এর আগে ইনু বলেন, 'এখন পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার সবগুলোই ঠিক আছে।'
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত