মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার যে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি তুরস্ক করেছিল, তাতে নতুন করে বদল আসতে পারে। ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, তুরস্ক এখন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে সেই অর্থ দিয়ে শুধু জেট ইঞ্জিন কিনতে চাইছে। এই ইঞ্জিনগুলো তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট কান-এর জন্য ব্যবহার করা হবে।
প্রাথমিকভাবে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪০টি এফ-১৬ ভাইপার যুদ্ধবিমান এবং ৭৯টি আধুনিক কিট কেনার পরিকল্পনা করেছিল। পরে তা কমিয়ে শুধু ৪০টি এফ-১৬ এবং সংশ্লিষ্ট গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্তে আসে, যার মূল্য দাঁড়ায় ৭ বিলিয়ন ডলারে।
তবে বর্তমানে তুরস্কের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বড় পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করছেন। তাদের যুক্তি, এফ-১৬ কেনা পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হোক। তার পরিবর্তে, চুক্তির অর্থ দিয়ে কাআন-এর জন্য প্রয়োজনীয় জেট ইঞ্জিন কেনা হোক, যা এফ-১৬-তে ব্যবহৃত জেনারেল ইলেকট্রিক-এর এফ১১০ ইঞ্জিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই পদক্ষেপ তুরস্ককে তার নিজস্ব সামরিক শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেবে।
তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কান-এর প্রথম প্রোটোটাইপগুলো এফ১১০ ইঞ্জিন দিয়েই পরিচালিত হবে। যদিও তুরস্কের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ২০৩০-এর দশকে নিজস্ব ইঞ্জিন তৈরি করা। কর্মকর্তাদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে এফ-১৬ কেনা একটি অস্থায়ী সমাধান মাত্র। বরং, কান-এর জন্য ইঞ্জিন সংগ্রহ করে নিজস্ব প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানকে দ্রুত পরিষেবা উপযোগী করে তোলা উচিত। তুর্কি কনসোর্টিয়ামের লক্ষ্য হলো ২০২৮ সালের শেষ নাগাদ কাআন-এর প্রথম জেটগুলো সরবরাহ করা, যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন তা ২০৩০ সালের কাছাকাছি হতে পারে।
এই চুক্তির পরিবর্তনের পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। কিছু কর্মকর্তা এফ-১৬ না কিনে এফ-৩৫ কর্মসূচিতে দ্রুত ফিরে যাওয়ার পক্ষে জোর দিচ্ছেন। ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার কারণে তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তুরস্কের জন্য তৈরি ছয়টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বর্তমানে মজুত আছে, যা তুরস্ককে দ্রুত হস্তান্তরের সুযোগ রয়েছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াশার গুলের আগেও বলেছিলেন, আঙ্কারা ৪০টি এফ-৩৫ কেনার লক্ষ্য রাখে।
তুরস্কের এই পরিবর্তিত দাবি মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি সূত্র মধ্যপ্রাচ্য আই-কে জানিয়েছে, পেন্টাগন জোর দিয়ে বলেছে যে এফ-১৬ চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এফ-৩৫ নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা শুরু হবে না। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, চুক্তি সিলড ডিল হয়ে যাওয়ায় এফ-১৬-এর বদলে শুধু জেট ইঞ্জিন বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তুরস্কের এই প্রচেষ্টা পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ক্ষমতার ভারসাম্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে গ্রীস ২০২৮ সালে প্রথম এফ-৩৫ পেতে চলেছে, সেখানে তুরস্কের পুরোনো এফ-১৬ বহর একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল