ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর এএসআই কামরুল হাসান জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘নিজের সাংকেতিক কল সাইন ‘ভিক্টর মাইক ওয়ান’ ব্যবহার করে গত বছর ১৭ জুলাই সকালে আন্দোলন দমনে সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তখন বার্তাবাহক হিসেবে আমি ও আমার দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে বার্তাটি পৌঁছে দিই।’
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই ডিএমপির কর্তব্যরত ওই ওয়্যারলেস অপারেটর। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশনের ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকালও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীম প্রমুখ।
গতকাল প্রসিকিউশনের ৫১তম সাক্ষী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরি ও রেকর্ড শাখার বর্তমান ইনচার্জ (পুলিশের এসআই) কামরুল হোসাইন এবং ৫২তম সাক্ষী একই শাখার সাবেক ইনচার্জ (পুলিশের এসআই) মো. আনিসুর রহমান নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে কামরুল হোসাইনের জেরা শেষ হয়েছে। অন্যদিকে আনিসুর রহমানের জবানবন্দি প্রদান চলমান থাকায় পুনরায় আজকের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া গতকাল প্রসিকিউশনের ৪৫ নম্বর সাক্ষী মো. শাহেদ জুবায়ের লরেন্সের পুনরায় জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
চাইনিজ রাইফেলের কথা শোনা যায়নি অডিওতে : জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে কামরুল হাসান ট্রাইব্যুনালকে একটি অডিও রেকর্ড দেন। জবানবন্দিতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, সেই অডিওতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, তিনি (কামরুল হাসান) এবং অন্যদের বার্তা আদানপ্রদানের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। অডিও বার্তায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি বারবার...বলেছি, নির্দেশ দিয়েছি, আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছি যেখানে যেমন সিচুয়েশন, সেভাবে... আপনারা করবেন, আপনারা নিলিং পজিশনে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে, হাঁটু গেঁড়ে কোমরের নিচে আপনারা গুলি করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন।’
যুক্তিতর্কে মোকাবিলা করব-প্রসিকিউশন : কামরুল হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অডিওবার্তায় জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করার কথা শোনা গেছে। এ জায়গাটা মামলার আর্গুমেন্ট করার জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে, না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আশুলিয়ার মামলায় আরও দুই সাক্ষীর জবানবন্দি : জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় গত বছর ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও দুজনের সাক্ষ্য করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী মতিউর রহমানের জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি আজ সরাসরি সম্প্রচার : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেবেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের জানান, এ বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা শেখ হাসিনার বেশ কিছু ফোনালাপ জব্দ করেছেন।
তিনি ওই সব ফোনালাপ ট্রাইব্যুনালে বাজিয়ে শোনাবেন এবং সেই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। এই জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।