লাদাখের লেহ শহরে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৭০ জনেরও বেশি মানুষ।
প্রথমে চলমান অনশন কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বিজেপির স্থানীয় কার্যালয় ও লেহ হিল কাউন্সিল সচিবালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়, কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েক ঘণ্টার অভিযানের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সহিংসতার পর কর্তৃপক্ষ ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ নিষিদ্ধ করে কারফিউ জারি করেছে।
আন্দোলনের নেপথ্যে কী?
লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি) এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে লাদাখকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এ আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন খ্যাতনামা জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক।
মঙ্গলবার অনশন কর্মসূচির ১৫ দিন পূর্ণ হওয়ার পর ওয়াংচুক সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক ৬ অক্টোবর ধার্য থাকলেও অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে আলোচনার তারিখ এগিয়ে আনার দাবি উঠেছিল। বুধবার এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে বিশাল জনসমাবেশ থেকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল বের করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রথমে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সহিংসতা বেড়ে গেলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়।
সোনম ওয়াংচুক ও আন্দোলনের প্রভাব
৭২ বছর বয়সী চেরিং আংচক এবং ৬০ বছর বয়সী ডোমা নামের দুই প্রবীণ অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে হাসপাতালে ভর্তি হন। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সোনম ওয়াংচুক তাঁর অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
ওয়াংচুক একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও জলবায়ু কর্মী। ২০১৮ সালে তিনি র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেকমল (SECMOL–Students’ Educational and Cultural Movement of Ladakh) স্কুল, যার উদ্দেশ্য ছিল লাদাখি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠন।
তিনি ‘আইস স্তূপা’ নামক কৃত্রিম হিমবাহ উদ্ভাবন করেন, যা শীতকালে অপচয় হওয়া পানি সংরক্ষণ করে পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট মোকাবিলা করে। বলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯)-এর ফুনসুখ ওয়াংড়ু চরিত্রটি তাঁর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত।
লাদাখিদের প্রধান দাবি
লাদাখিদের প্রধান দাবিগুলো হলো—
-
সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষা,
-
লাদাখকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা প্রদান,
-
ভঙ্গুর পরিবেশের সুরক্ষার নিশ্চয়তা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
বিডি প্রতিদিন/আশিক