ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অনলাইনভিত্তিক পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ পদ্ধতি ব্যস্তবায়নে চারটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ইসিকে। গতকাল নির্বাচন ভবনে আউট অব কান্ট্রি ভোটিং (ওসিভি) বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন ও লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইসির অনলাইন মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ চারটি হলো ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা; আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে ভোট বাতিলের ঝুঁকি; ব্যালট পৌঁছানোর ব্যর্থতা এবং পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধনের হার খুব কম।
এদিকে আগামী নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অ্যাপ (পোস্টাল ভোট বিডি) উদ্বোধন হবে। এতে প্রবাসীরা নিবন্ধন করতে সময় পাবেন ১০ দিন। এ ছাড়া প্রবাসীরা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটার হতে পারবেন। সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা দেশের ভোটারদের চেয়ে অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ভোট দেবেন।
মতবিনিয়ম সভায় নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, পোস্টাল ব্যালটের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জ হলো ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা এবং আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে ভোট বাতিলের ঝুঁকি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ডাকযোগে ব্যালট পৌঁছানোর ব্যর্থতার হার প্রায় ২৪ শতাংশ, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার খুব কম। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগ্রহ বেশি। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে ভোট দেওয়ার জন্য আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশনের জন্য আমরা একটি অ্যাপ ডেভেলপ করছি। এ অ্যাপটা লঞ্চ হবে নভেম্বরের থার্ড উইকে। সেকেন্ড উইকে আমরা চেষ্টা করছি। তখন থেকে আমরা আগেভাগে সার্কুলার দিয়ে প্রচারের মাধ্যমে-সোশ্যাল মিডিয়ায় হোক, আমাদের ন্যাশনাল মিডিয়ায় হোক-জানিয়ে দেব কোন অঞ্চল থেকে পৃথিবীর কোথায় রেজিস্ট্রার করতে পারবেন ভোটাররা।’ ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ভোটারদের প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি), তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন। তাদের শুধু আউট অব কান্ট্রি ভোটিংয়ের জন্য আলাদা নিবন্ধন করতে হবে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে একটি অ্যাপ চালু হবে, যার মাধ্যমে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে এ সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার খুব কম। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগ্রহ বেশি। ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা সীমিত হলেও আমরা ব্যর্থ হব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা হাইব্রিড সলিউশন এখানে ইন্ট্রোডিউস করতে যাচ্ছি। সেটা হচ্ছে যারা আগ্রহী ভোটার আছেন ও যারা ভোট দিতে চাইবেন, তারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। তাদের কাছে ব্যালটটা আগেই চলে যাবে। এ ব্যালটটা হবে শুধু প্রতীকসংবলিত। এ প্রতীক ব্যালটটি তার কাছে চলে যাবে। একটা নির্দেশনা থাকবে তার জন্য, একটা ডিক্লারেশনও থাকবে। নির্দেশনায় লেখা থাকবে যে তিনি কবে নাগাদ এ ভোটটা দিতে পারবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে যখন প্রতীক বরাদ্দ হবে প্রার্থীর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তখন নিশ্চিত হবে। এর পরে তিনি তার মোবাইল ফোনে অ্যাপের মাধ্যমে অথবা আমাদের ওয়েবসাইটে দেখতে পারবেন যে তার সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা কী। কজন দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের প্রতীক কী।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাপে বা অনলাইনে সেই তালিকা দেখার পরে তিনি ভোট দেবেন এবং ভোট দেওয়ার পর তিনি খামটি আবার ফেরত পাঠাবেন। এবারের ভোটের জন্য আমরা প্রবাসীদের কোনো ধরনের চার্জ অ্যাপ্লাই করছি না। যদিও বা প্রতিটি ভোটের জন্য ৭০০ টাকার মতো ব্যয় হবে। আমরা মনে করি এটি একটি যৌক্তিক ব্যয় প্রবাসীদের জন্য।’