বয়স ৩৮। ক্রিকেটাঙ্গনে যে-কারও থেমে পড়ার বয়স। সমবয়সি তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি বিন মর্তুজারা থেমে পড়েছেন। অথচ মুশফিকুর রহিম এখনো ছুটছেন। ছুটছেন ইন্টারসিটি রেলের গতিতে। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা রাখতে অনুশীলনে সময় দেন অন্য যে-কারও চেয়ে বেশি। ফিটনেস জুনিয়রদের চেয়ে এগিয়ে। তার পরও অনেকে বলছেন, এখনই সঠিক সময় ব্যাট, গ্লাভস, প্যাড তুলে রাখার। হয় তো এ বছরই থেমে যাবেন। তুলে রাখবেন ব্যাট, গ্লাভস। কোনো সন্দেহ নেই, বিদায়ের আগে এক মহাকীর্তি গড়ে যাবেন মুশফিক; যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল। এখন পর্যন্ত যা কেউ করেননি, করতে পারেননি। অদূর ভবিষ্যতে কে করবেন, এ নিয়ে বিতর্ক চলবে বহু বছর। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার বিরল কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মুশফিক। সাবেক অধিনায়ক যদি শতভাগ সুস্থ থাকেন, হয়তো ১৯ নভেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামবেন। এমন একটি মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ রং বদলে রূপ নিয়েছে ঐতিহাসিক সিরিজে। অবশ্য মুশফিক এখন যা করবেন, সেটাই রেকর্ড। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৯৯তম টেস্ট খেলবেন। এরপর ১০০ টেস্ট। দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল হক। ওয়ানডেকে বিদায় জানিয়েছেন। বিদায় বলেছেন টি-২০ ক্রিকেটও। এখন শুধু টেস্ট খেলছেন। অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসেন। সেজন্যই খেলছেন। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১১ নভেম্বর ক্যারিয়ারের ৯৯ নম্বর টেস্ট খেলতে নামবেন মুশফিক। তখন ড্রেসিং রুমে বসে থাকবেন তাঁর অভিষেক টেস্টের সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০ বছর আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। ওই টেস্টে খেলেছিলেন আশরাফুলও। সেই আশরাফুল এবারও ড্রেসিং রুমে থাকছেন। তবে ক্রিকেটার সতীর্থ নয়, ব্যাটিং কোচ হিসেবে। মুশফিকের ঐতিহাসিক সিরিজে থাকতে পেরে আনন্দে আত্মহারা টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিম্যান আশরাফুল, ‘আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি, আল্লাহ আমাকে এমন একটি সুযোগ করে দিয়েছেন মুশফিকের ১০০তম টেস্টটি ড্রেসিং রুমে বসে দেখব। মুশফিকের অভিষেক ম্যাচে আমি ড্রেসিং রুমে ছিলাম লর্ডসে। এখানে ৯৯ ও ১০০তম টেস্টেও আমি থাকব।’ মুশফিকের অভিষেক টেস্টে সতীর্থ ছিলেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন মুশফিক। অথচ সবার আগে সেঞ্চুরি করার সুযোগটি সৃষ্টি হয়েছিল আশরাফুলের। দুজনে গল টেস্টেই বিরল কীর্তির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। আশরাফুল ১৯০ রানে আউট হলেও মুশফিক ভুল করেননি। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। ৯৮ টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন ১২টি। ডাবল সেঞ্চুরি ৩টি। ৯৮ টেস্টে রান করেছেন ৬৩২৮। এই যে একটি কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মুশফিক, এর জন্য মুশফিকের একাগ্রতার প্রশংসা করেছেন আশরাফুল, ‘মুশফিক বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার ১০০ টেস্ট খেলবে, এটা বিরাট গর্বের বিষয়। এক ফরম্যাট নয়, তিনটিতেই সে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিল। এখনো খেলছে। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছে সে।
২০১৩ সালের পর সেঞ্চুরি করলেই বোঝা যায় সে বড় বড় ইনিংস খেলে। আয়ারল্যান্ড সিরিজেও যদি স্টার্ট পায় তাহলে সে বড় করবে। এটাই আশা থাকবে। ভালো ফর্মেও আছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছে।’
মুশফিক টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০ তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন। দেশকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। একাগ্রতা, কমিটমেন্ট যে কোনো ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি।
