ঢাকা-১৭ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০২৬) প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক শহীদ জহির রায়হান এবং অভিনেত্রী সুচন্দার ছেলে তপু রায়হান।
রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেন তপু রায়হান।
নিজের নির্বাচনী ইশতেহারকে ‘ঐকমত্যের ইশতেহার’ হিসেবে উল্লেখ করে তপু বলেন, “আমি কোনো প্রথাগত রাজনীতি করতে আসিনি, বরং সহযোগিতার রাজনীতি চালু করতে চাই।”
ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে মা সুচন্দা বলেন, “জয়-পরাজয় থাকবেই। আমার ছেলে যেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করে, সেটাই আমি চাইব। পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছি। হয়তো আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে উনিও খুব খুশি হতেন। আমার ছেলে বলে বলছি না, মানুষের প্রতি তপুর ভীষণ ভালোবাসা।”
প্রয়াত লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নিখোঁজের পর অভাবে গাছের পাতা খেয়ে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান তার স্ত্রী ও বর্ষীয়ান অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।
তিনি বলেন, “এমনও দিন গেছে, সন্তানদের নিয়ে গাছের পাতা খেয়েছি। কারণ, তখন প্রায় সময়ই খাবার জুটত না। তারপরও হাল ছাড়িনি। সন্তানদের মানুষ করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, তারা তাদের বাবার মতোই মানবিক ও দেশপ্রেমিক হবে। রাজনীতি না করলেও রাজনৈতিক আদর্শ লালন করে মানুষের জন্য কাজ করবে। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তারা তাদের বাবার মতোই হয়েছে।”
সুচন্দা আরও বলেন, “দেশ স্বাধীন করতে যখন মাঠে নেমেছিলাম, তখন পায়ে জুতা ছিল কি না, তা খেয়াল করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। তখন সংসদ কী, তা বুঝতাম না।”
তিনি বলেন, “জহির রায়হান রাজনীতি করতেন না, তবে রাজনীতি লালন করতেন সব সময়। তার লেখনী ও চলচ্চিত্রে সব সময় দেশ ও মানুষের কথা থাকত। তিনি নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কাজ করতেন।”
সুচন্দা জানান, “আমাদের ছোট ছেলে তপু রায়হান বাবাকে দেখেনি। কিন্তু তার মধ্যে আমার স্বামী জহির রায়হানের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। সে সুযোগ পেলেই মানুষের কল্যাণে ছুটে যায়। তাই ঢাকা-১৭ আসনে এবার তার নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে আমি খুশি হয়েছি। হার-জিত থাকবেই, আমার বিশ্বাস সে মানুষের সমর্থন পাবে।”
নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারলে সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তপু রায়হান বলেন, “আমি জয়ী হই কিংবা হেরে যাই, নির্বাচনের পর ঢাকা-১৭ আসনে যিনি এমপি হবেন, আমি এলাকার উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে তাঁর সঙ্গে একত্রে কাজ করব। নির্বাচনে জয়ই আমার একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ, তাদের সমস্যা বোঝা এবং সবার অংশগ্রহণে এমন একটি উন্নয়ন মডেল তৈরি করা, যা সারা দেশের জন্য অনুসরণযোগ্য হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা-১৭ আসনের গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, শাহজাদপুর, ভাসানটেক ও মহাখালী এলাকার সমস্যাগুলো আমি জানি। কোথায় কোন খাতে, কোন ধরনের উন্নয়ন প্রয়োজন সে সম্পর্কেও আমার পরিষ্কার ধারণা আছে। কিছু সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে আমি অনেক দিন ধরে কাজ করছি। সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো প্রায় একই রকম—বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষের সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধান করা গেলে তা সারা দেশের জন্য একটি কার্যকর মডেল হতে পারে।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক