জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যে, তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
এ ঘোষণা এল এমন সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—এই ই-থ্রি দেশগুলোর উদ্যোগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করার ৩০ দিনের প্রক্রিয়া আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। ই-থ্রির অভিযোগ, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ইরান।
তবে তারা জানিয়েছে, ইরান যদি জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হবে।
জাতিসংঘে পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক্স-এ লিখেছেন, “চুক্তি এখনও সম্ভব। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইরানের উচিত আমাদের যৌক্তিক উদ্বেগগুলোর জবাব দেওয়া।”
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া এবং এর পর বিমান হামলার ঘটনায় তেহরান জানিয়েছিল, এসব কারণেই তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিয়ে দিয়েছে।
পেজেশকিয়ান ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, “তারা নিজেদের সৎ পক্ষ দেখালেও আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় কাজ করছে। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখানো হয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউরোপীয়রা আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে গিয়ে ইরানের বৈধ পদক্ষেপগুলোকে ভ্রান্তভাবে ‘চুক্তি ভঙ্গ’ হিসেবে প্রচার করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি গত মঙ্গলবার বলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ইরানের বিদেশি সম্পদ জব্দ হতে পারে, অস্ত্র চুক্তি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কঠোরভাবে সীমিত করা হবে।
জাতিসংঘে ভাষণে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক হামলার নিন্দা জানান। তিনি দাবি করেন, এসব হামলায় ইরানের বহু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের বিমান হামলায় এক হাজারেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে। পেজেশকিয়ান বলেন, “দেশপ্রেমিক ও সাহসী ইরানি জনগণ প্রমাণ করেছে, আগ্রাসনের সামনে তারা কখনোই মাথা নত করবে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল এখনো প্রকাশ্যে “গ্রেটার ইসরাইল” পরিকল্পনার কথা বলছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাফার জোন তৈরি। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছরের গণহত্যা, অনাহার, দখলকৃত ভূখণ্ডে বর্ণবৈষম্য এবং আগ্রাসন চালিয়েও ইসরাইল এই অবাস্তব ও দুঃসাহসী পরিকল্পনা ধরে রেখেছে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক