আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সরকার। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোকেও তৎপর দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভোটারদের মতামত জানতে জরিপ চালিয়েছে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং। সংস্থাটি তাদের ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে রাউন্ড টু’-এর দ্বিতীয় অংশের ফল প্রকাশ করেছে। জরিপে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ৪১.৩০ শতাংশ ভোটার। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যাদের প্রতি ৩০.৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন দেখা গেছে। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন ১৮.৮০ শতাংশের। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৪.১০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও আর্কাইভ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সরওয়ার। দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি জেলা থেকে ৯ হাজার ৩৯৮টি পরিবারের ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটারের ওপর জারিপটি চালিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, এ বছরের ১ মার্চ প্রথম রাউন্ডের জরিপে ভোটারদের কাছে বিএনপির অবস্থান ছিল ৪১.৭০ শতাংশ। জামায়াতের অবস্থান ছিল ৩১.৬০ শতাংশ। আওয়ামী লীগের ১৪ শতাংশ ও এনসিপির ছিল ৫.১০ শতাংশ। দ্বিতীয় রাউন্ডে সমর্থন বিএনপির দশমিক ৪০ ও জামায়াতের ১.৩ পয়েন্ট কমেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৪.৮০ পয়েন্ট বেড়েছে। সরকার গঠনের সম্ভাবনা কার বেশি? ভোটারদের মতে, পরবর্তী সরকার গঠনের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা আছে বিএনপির। ৪০ শতাংশ ভোটার মনে করেন বিএনপি সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে ২৩.৩ শতাংশ ভোটারের ধারণা জামায়াত সরকার গঠন করতে পারে।
১২.১ শতাংশ ভোটার মনে করেন আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করবে। নতুন দল এনসিপির সরকার গঠনের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন ৩.৮ শতাংশ ভোটার। এ ছাড়া বিএনপির ভোট ব্যাংক বয়স্ক ভোটারদের নিয়ে গঠিত। তাদের ৬১ ঊর্ধ্ব বয়সের ভোটার ৪৮.৬। জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের ভোটার আছে ৩২.৮ শতাংশ। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে মিশ্র দেখা গেছে। এর মধ্যে ৬১ বছর ঊর্ধ্বদের ১৯ শতাংশ ও ৪৫-৬০ বছর বয়সিদের ১৮.৮ শতাংশ। এ ছাড়া কম শিক্ষিত ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে বিএনপি। আর উচ্চ শিক্ষিতদের পছন্দে এগিয়ে জামায়াত।
কোন বিভাগে কে এগিয়ে? জরিপে দেখা গেছে, বিএনপি ছয়টি বিভাগে এগিয়ে আছে। জামায়াত রংপুরে এবং আওয়ামী লীগ বরিশালে এগিয়ে আছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বিএনপি ৪০.৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ২৫.৮, জামায়াতের ২৪.৩ ও এনসিপি ৩.২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি ৪১.৯ শতাংশ, জামায়াত ২৭.৬, আওয়ামী লীগ ১৭.১ ও এনসিপি ৭.৭ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগ ৩১.৯, জামায়াত ২৯.১, বিএনপি ২৮.৭ ও এনসিপি ৩.৯ শতাংশ। খুলনা বিভাগে বিএনপি ৪৩.৩ শতাংশ, জামায়াত ৩০.১, আওয়ামী লীগ ১৮.৩ ও এনসিপি ৩.৬ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে বিএনপির সমর্থন ৪৪.৪ শতাংশ। জামায়াতের ৪০.৯, আওয়ামী লীগের ৯.২ ও এনসিপির ২.২ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপির সমর্থনস ৪৫.৭, জামায়াতের ২৫.৮, আওয়ামী লীগের ১৭.৩ ও এনসিপির ৪.৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে জনসমর্থনের শীর্ষে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন ৪৩.৪ শতাংশ মানুষ। বিএনপির প্রতি ৩৬.৭, আওয়ামী লীগের প্রতি ১২.৫ ও এনসিপির ১.২ শতাংশ মানুষ।
প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতার দিকে নজর ভোটারের : জরিপে আরও দেখা গেছে, ৬৫.৫ শতাংশ ভোটার দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে প্রার্থী বিবেচনায় ভোট দিতে আগ্রহী। মাত্র ১৪.৭ শতাংশ ভোটার প্রতীক দেখে ভোট দেবেন।
স্থানীয় রাজনীতিতে কোন দলের প্রতি ভোটাররা বেশি সন্তুষ্ট? স্থানীয় রাজনীতিতে দলগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ভোটারদের সন্তুষ্টির হারও জরিপে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, সাধারণভাবে অন্যান্য দলের তুলনায় ভোটাররা জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সন্তুষ্ট। তরুণ প্রজন্ম এবং নারীরা জামায়াতের কার্যক্রমে তুলণামূলক বেশি সন্তুষ্ট। বিএনপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ৮.২ শতাংশ, জামায়াতের ১৩.৭ শতাংশ এবং এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ৯.১ শতাংশ ভোটার।
আওয়ামী লীগকে কত শতাংশ ভোটার নির্বাচনে দেখতে চান? জরিপে দেখা গেছে, ৪৫.৫৮ শতাংশ ভোটার মনে করেন, আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার আগে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়। অপরদিকে ৪৫.৭৯ শতাংশ মনে করেন, সব দলকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে সমর্থকরা কোন দলকে ভোট দেবেন? যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তাদের সমর্থকদের একটি বড় অংশ অন্য দলগুলোকে ভোট দিতে আগ্রহী। জরিপ বলছে, আওয়ামী লীগের ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ ভোটার এনসিপিকে ভোট দিতে আগ্রহী।
জরিপ অনুযায়ী, ভোটারদের একটি অংশ এখনো ভবিষ্যৎ সরকার নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ভোটাররা ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে নিরপেক্ষভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করেন। এ জরিপে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের মনোভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে।