৪৫ বছরেও স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। গ্রুপ পর্ব খেলে এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাই থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। চূড়ান্ত পর্বে খেলার যে সম্ভাবনাটুকু রয়েছে তা সাত সমুদ্র পারি দেওয়ার মতো। প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর এক পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ভারতের সংগ্রহ ২, সিঙ্গাপুরের ৫ ও ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে হংকং চায়না। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে হংকং বা সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি দেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। তিন ম্যাচে দুই হার ও ১ ড্রয়ে আট পয়েন্ট নষ্ট করায় এশিয়ান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সম্ভব, যদি মিরাকেল কিছু ঘটাতে পারে। আর তা হবে হামজারা যদি দ্বিতীয় পর্বের তিন ম্যাচ জেতেন সম্ভাবনা টিকে থাকবে। তিন ম্যাচ জিতলেই চলবে না, অন্যদের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
হ্যাটট্রিক জয় পেলে হামজাদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ১০-এ। অন্যরা কী করবে যেটা পরের বিষয়। বাংলাদেশ আগে নিজেদের তিন ম্যাচ জিতুক তারপর না অন্য হিসাব। প্রথম পর্বে কোনো জয় না পাওয়ার পরও কী টানা তিন ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে আশা করা যায়? অন্য সময় হলে সরাসরি না বলা যেত। এখন সব অসম্ভব সম্ভবই বলা যায়। প্রথম পর্বেই তারা ৭ পয়েন্ট নষ্ট করেছে। তারা আবার সব অসম্ভব সম্ভব করে কীভাবে?
হামজা, সামিত, ফাহমিদুলরা আসার পর বাংলাদেশের খেলার ধরন বদলে গেছে। সেই বেহাল দশা নেই। তিন ম্যাচেই জেতা সম্ভব ছিল। শিলিগুড়িতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি শোলশূন্য ড্র হয়। সেই ম্যাচে অভিষেক হয় হামজার। তাঁর নৈপুণ্যে বাংলদেশ দুর্দান্ত খেলেও জয়ের দেখা পায়নি। ঢাকায় সিঙ্গাপুরের কাছে হেরেছিল ভুল খেলোয়াড় সিলেকশনে। তারপরও অসংখ্য সুযোগ পেয়েছিল কাজে লাগাতে পারেনি। সেদিনই সামিত ও ফাহমিদুল প্রথম খেলেছিলেন জাতীয় দলে।
সিঙ্গাপুরের পর ঘরের মাঠে হংকং চায়নার কাছে হেরে যায়। অথচ গত ১০ বছরে বাংলাদেশ এত ভালো খেলেনি। হামজার দর্শনীয় গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ সময়ে রক্ষণভাগের ভুলে গোল খেয়ে বসে। দ্বিতীয়ার্ধে আবার ১-৩ গোলে পিছিয়ে পড়ে। সামিত, ফাহমিদুল, জামাল ও জায়ান নামার পর পুরো ম্যাচই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচে ৩-৩ সমতাও ফেরে। অথচ ম্যাচ শেষের ৩০ সেকেন্ড আগে গোল খেয়ে বসে। রক্ষণভাগ বা গোলরক্ষকের ব্যর্থতা তো ছিলই। প্রমাণ হয়ে যায় কোচ হাভিয়ের কাবরেরার একাদশ সাজানোটা ভুল ছিল। সামিত, ফাহমিদুল, জায়ান ও জামালকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখাটা ঠিক হয়নি। যদি তারা শুরু থেকে খেলতেন হয়তো এমন হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো না।
হংকংয়ের বিপক্ষে প্লেয়ার সিলেকশন নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। তবে যা ঘটে গেছে তা তো আর ঠিক হবে না। চোখ এখন হংকং ফিরতি ম্যাচের দিকে। বাংলাদেশ দল এখন হংকংয়ে অবস্থান করছে। ১৪ অক্টোবর ম্যাচ। এ কথা হয়তো কেউ কেউ বলতে পারেন ঘরের মাঠেও যখন পারল না। তখন হংকংয়ে আর কী করবে বাংলাদেশ। না এখন আর সেই বলাটা ঠিক হবে না। এক বছর আগেও যদি হতো বলা যেত হংকংয়ে দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। হামজা, সামিত, জায়ান, ফাহমিদুলরা আসার পর আগের সেই রুগ্ন অবস্থা নেই। ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে সামিত, জায়ান, ফাহমিদুল বা জামালরা নামার পর বাংলাদেশ যে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল তাতেই আশা জাগাচ্ছে। ভুল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। কোচ কাবরেরা দ্বিতীয় পর্বে তা কি কাজে লাগাবেন?
বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা তাতে চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে চেষ্টা তো করা যেতে পারে। হেড কোচকে বাকি তিন ম্যাচে পরিকল্পনা করেই দল সাজাতে হবে। অধিনায়ক জামালকে শুরু থেকে না নামানোটা যে ঠিক হচ্ছে না তা আবার হংকং ম্যাচেই প্রমাণ মিলেছে। সেই সঙ্গে হামজার সঙ্গে সামিত, ফাহমিদুল ও জায়ান আহমেদকে শুরুতেই দলে রাখা উচিত। অল্পক্ষণ খেলেই তরুণ জায়ান তার জাত চিনিয়েছেন। ধরে নিলাম এখন আর চূড়ান্ত পর্বে খেলা সম্ভব না। তারপরও যদি বাকি তিন ম্যাচ জেতে তা কি বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি নয়?
কাবরেরাকে এখন ঠান্ডা মাথায় দল সাজাতে হবে। মনে রাখতে হবে তাঁর বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। টিকবেন কি না তা নির্ভর করছে তিন ম্যাচের ওপর।