দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)-এর চাহিদা ও ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ চাহিদা ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি: অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বর্তমানে দেশে জাতীয়ভাবে এলপিজির আমদানি প্রায় দেড় মিলিয়ন টন। ২০৪১ সালের মধ্যে এই চাহিদা বেড়ে ৫ মিলিয়ন টনে এবং ২০৫০ সালে তা ১০ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এলপিজির মূল সমস্যা হচ্ছে এর দাম। দাম কমানো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব নিতে হবে, একইসঙ্গে এলপিজি ব্যবহার করে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড ও বিপিসি মিলে মাতারবাড়িতে একটি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে, যা সম্পন্ন হতে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লাগবে। এলপিজি অপারেটরদের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে কোনো ধরনের হয়রানি না হয়, সে বিষয়েও বিইআরসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এক লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতার দুটি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রকল্পগুলো বর্তমান সরকার নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে, তা অনিশ্চিত।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, আমদানিকৃত এলপিজির জন্য যদি আমাদের নিজস্ব টার্মিনাল থাকত, তাহলে অনেক সুবিধা হতো। এজন্য মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে এলপিজির দাম আরও সাশ্রয়ী হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে প্রায় ৫৮০টি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্যাস নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এলপিজি গ্যাসকে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সুলভ মূল্যে সরকার যে গ্যাস সরবরাহ করছে, তা যেন প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছায়, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এছাড়া ওয়ান-স্টপ সার্ভিসসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, এলপিজি অপারেটরদের প্রায়ই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। সরকারের নানা বিধিনিষেধের কারণে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি না। নীতিনির্ধারণে সরকার যখন তখন পরিবর্তন আনে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেকোনো নীতি জনগণ ও অংশীজনদের মতামত নিয়ে তৈরি করা উচিত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, এলপিজি শিল্প দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। তবে মূল্য, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূর করতে হলে সরকার, বেসরকারি খাত ও ভোক্তা সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ