মায়ের ডাকের অন্যতম সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেছেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পর অপেক্ষায় ছিলাম, আমার ভাই ফিরে আসবে। কিন্তু সে ফিরে আসেনি। এতে আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়েছি।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে আয়োজিত এক জাতীয় পরামর্শ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র ও সোশ্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস পালনের জন্য এ জাতীয় পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকার সংগঠক রেজাউর রহমান লেলিন।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, আর কত কান্না করলে, আর কত দিন স্বজনের ছবি বুকে নিয়ে ঘুরলে গুম-খুনের বিচার পাব। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ না দেওয়ারও সমালোচনা করেন তারা।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শাহবাগ থেকে গুম হন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেন। গতকালের অনুষ্ঠানে তার ১২ বছর বয়সি মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি বলে, ‘৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম, আমার বাবা ফিরে আসবেন। আমি বাবাকে ছুঁয়ে দেখব। কিন্তু ১০ মাস হয়ে গেলেও বাবা ফিরে এলেন না। বাবা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সেটাও জানতে পারলাম না। একটা দল করার কারণে আমার বাবাকে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’ যারা গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার, বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিগত দিনে যেভাবে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা সেভাবে হয়তো দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে। এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আমরা শুরু থেকেই মায়ের ডাকসহ গুম পরিবারের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও তাদের ন্যায়সংগত সব সংগ্রামে অংশগ্রহণ করব। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনার আমলে প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে। এখনো তাদের সন্তানরা ট্রমার মধ্যে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের কখনো ভুলে গেলে চলবে না। সওয়াব-এর সিইও এবং চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম আঁখি, পুলিশের গুমের শিকার সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা, গুম ও খুনের শিকার ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টুর বোন মিতু আক্তার, গুমের শিকার এরশাদ আলী লাডলার পিতা মোহাম্মদ মাহবুব আলী প্রমুখ।