ট্রাম্পশুল্ক কমায় কিছুটা স্বস্তি এলেও বর্তমানে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ব্যবসায়ীদের জন্য বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, আগের সরকারের ভুল তথ্যের ওপর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করেছে বর্তমান সরকার। অথচ এখান থেকে ফেরত আসার সুযোগ ছিল। সেটা না করায় এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সুবিধাও কমে যাবে। ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে শুল্ক বাড়বে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, জিএসপি প্লাস বা সমজাতীয় সুবিধা না পেলে রপ্তানি আয় ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেসরকারি খাত। এজন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক কাটছেই না। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দেওয়ারও দাবি ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য পরপর দুটি পর্যালোচনায় জাতিসংঘের তিনটি মানদণ্ড মোট জাতীয় আয় (জিএনআই), মানবসম্পদ সূচক (এইচএআই) ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) পূরণ করায় বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণের হওয়ার কথা। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে হলে এতদিন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব শুল্ক ছাড় ও পেটেন্ট সুবিধা পেত তা আর বলবৎ থাকবে না। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। এ পথে এগিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুতি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে দীর্ঘদিন আমরা কথা বলেছি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে কোনো রকম পরিবেশ-পরিস্থিতি আমাদের নেই। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে রোডম্যাপ নেই। এর পরের কোনো রোডম্যাপ নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেনি। এখান থেকে ফেরত আসার সুযোগ ছিল এ সরকারের। আগের সরকার ভুল তথ্যের ওপর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করেছে।’ বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘আগে আমেরিকার শুল্ক সমস্যা ছিল। বর্তমানে সমস্যা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে শিল্প সমস্যায় পড়বে। কারণ ক্লাস ১০-এর ছাত্র মাস্টার্সের পরীক্ষায় কীভাবে পাস করবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন শিল্পের জন্য আতঙ্ক। এটির উত্তরণ শুল্ক থেকেও আমাদের জন্য বড় আতঙ্ক।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা কমে যাবে। ইউরোপ, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্তের সুবিধা থাকবে না। যার ফলে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমে যাবে। আমাদের প্রস্তুতির জন্য আরও দুই-তিন বছর সময় দরকার।’
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন দেশের জন্য বড় ঝুঁকি ডেকে আনবে। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন তিন থেকে ছয় বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের। এর মধ্যে বাজারে প্রবেশাধিকার বজায় রাখা ও শুল্কজনিত ধাক্কা এড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য (ইউকে) এবং প্রধান এশীয় অর্থনীতির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা প্রয়োজন। তাদের মতে, এলডিসি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। এজন্য ওষুধ, আইটি সেবা, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এসব পদক্ষেপ ছাড়া এলডিসি উত্তরণ অর্থনৈতিক গতি বাড়ানোর পরিবর্তে কমিয়ে দিতে পারে।