দীর্ঘদিন ধরে সৌদিপ্রবাসী শামীম তালুকদারের বাড়ীতে কাজ করতেন তুহিন নামের একটি ছেলে। সেই কাজের ছেলে তুহিনই যে পরিবারটি সর্বনাশ করবে তা কে জানতো। তুহিনের নেতৃত্বে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয় শামীম তালুকদারের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তামিমকে। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে তামিমকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ তুহিনকে আটক করলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত তুহিনসহ আমিরুল নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে শিশু শিক্ষার্থী তামিমের নৃসংশ হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে ফরিদপুরবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী, পুলিশ ও তামিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে. ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বড় গোপালদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামিম তালুকদার (১১) বাড়ীর পাশে মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় গত ১৫ আগষ্ট। সন্ধ্যা হয়ে গেলে তামিম বাড়িতে না আসায় তার মা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তামিমের কোনো সন্ধান পাননি। ১৫ আগষ্ট রাতে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসাবে ১৫ লাখ টাকা চায় তামিমের মায়ের কাছে। এ নিয়ে অপহরণকারীদের মধ্যে তামিমের পরিবারের কয়েক দফা ফোনে কথা হয়। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তামিমকে হত্যার হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। এ ঘটনার পর তামিমের পরিবারের পক্ষ থেকে মধুখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার মধুখালী থানা পুলিশ তুহিন শেখকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার রাতে মধুখালীর কোরকদি ইউনিয়নের বাঁশপুর এলাকার একটি ডোবা থেকে আর্বজনা দিয়ে ঢেকে রাখা তামিমের মরদেহটি উদ্ধার করে। তামিম হত্যার সাথে জড়িত আমিরুল (২৫) নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে ঘাতক তুহিনের বাড়ি মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর থানায় ও আমিরুলের বাড়ি মাগুরা জেলার সদর থানায়। স্থানীয়রা জানান, তামিমের পরনে যে গেঞ্জি ছিল তা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় তামিমকে।
এদিকে সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত পরিবারসহ পুরো এলাকার মানুষ। তামিমের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিখোঁজের পরই ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিলো। টাকা দিতেও চেয়েছিল পরিবার, তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।
মধুখালী থানা পুলিশ বলছে ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। মুক্তিপণ আদায়ের দাবিতেই অপহরণ করা হয়েছিল শিশুটিকে। মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান জানান, পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত তুহিন শেখকে আটক করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, তদন্ত করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরো জানান এই চক্রটি আরো কোনো ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশ আটক দুইজনকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার আদালতে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, তামিমের বাবা সৌদিআবর থেকে মঙ্গলবার দেশের পথে রওয়ানা দিয়েছে। তিনি আসলেই তামিমের মরদেহ দাফন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল