চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির কড়াকড়ি। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা কার্যক্রম। তার পরও প্রায় প্রতিদিনই জব্দ হচ্ছে কোটি টাকার চালান। অর্থাৎ থামছে না চোরাকারবার।
বিজিবি সিলেট সদর দপ্তরের আওতাধীন ৪৮ ও ১৯ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ১৮ মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়েছে। সিলেটের স্থানীয় বাজারে বিপুল পরিমাণ চোরাই পণ্য প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা ও আমদানিকারকরা। চোরাইপথে আসা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমদানিকারকরা পথে বসার উপক্রম হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সিলেট জেলার তিন দিকে ভারত সীমান্ত। আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে থাকা সীমান্ত এলাকার বেশির ভাগ অংশই দুর্গম। যে কারণে চোরাকারবারিরা চোরাচালানের জন্য এ দুর্গম সীমান্তকেই বেছে নিয়েছে। যদিও চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। দিনের পাশাপাশি রাত্রিকালীন টহলও বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বেপরোয়া চোরাকারবারিরা। চোরাইপণ্যে লাভ বেশি হওয়ায় কোটি কোটি টাকার চালান ধরা পড়ার পরও দমছেন না কারবারিরা। এক সময় সিলেট সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে গরু-মহিষ ও চিনি আসত। গত প্রায় দুই বছর থেকে চোরাকারবারিরা গরু-মহিষ ও চিনির সঙ্গে ঝুঁকেছেন ভারতীয় কাপড় ও কসমেটিক্স চোরাচালানে।
সূত্র জানায়, চোরাইপণ্য প্রথমে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় মজুদ করা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে আনা হয় সিলেট শহরে। সম্প্রতি কালিঘাটের দুটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে সেনাবাহিনী ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় ও কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন ধপ্রণর ভারতীয় পণ্য জব্দ করে। সিলেটে সর্বশেষ ভারতীয় চোরাইপণ্যের চালান জব্দ হয় গত মঙ্গলবার। জৈন্তাপুরের হরিপুরে একটি ট্রাক তল্লাশি করে চালুচাপা অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় ও কসমেটিক্স জব্দ করে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে সিলেটে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে বিজিবি সিলেট সেক্টর ২২০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮৫ টাকার পণ্য জব্দ করে। আর চলতি বছরের ছয় মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকার চোরাইপণ্য জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি সিলেট সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, সীমান্তে চোরাচালানরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বোতভাবে অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায়ই বিপুল পরিমাণ চোরাইপণ্য জব্দ করা হচ্ছে।
বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার জানান, চোরাচালানরোধে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তাদের সচেতন করতে ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে আগামী মাসে কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।