বাংলাদেশের হবিগঞ্জের মাটির বিস্কুট ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে। এসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীরা কিনে নিয়ে আসেন ছিকর। হালকা টক ও মিষ্টি ধরনের এ ছিকর গর্ভাবস্থায় অনেক নারী খেতে পছন্দ করেন। পাহাড়ের মিহি এঁটেল মাটি প্রক্রিয়াজাত করে আগুনে পোড়ানোর পর তৈরি হয় এই মাটির বিস্কুট। ছিকর শুধু খাবার নয়, একসময় ছিল লোকঔষধের অংশও। গ্যাস্ট্রিক, হজমের সমস্যা বা গর্ভবতী নারীদের বমিভাব কমাতে গ্রামীণ মানুষ ব্যবহার করত মাটির বিস্কুট। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, মাটির বিস্কুট অবশ্যই শতভাগ বিশুদ্ধ ও ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত হতে হবে। দূষিত বা দূষণমিশ্রিত মাটি খেলে তা শরীরে বিষক্রিয়া, পরজীবী সংক্রমণ বা
অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঐতিহ্য হিসেবে ছিকর নিরাপদ হলেও এর স্বাস্থ্যগত দিকটি নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি। স্থানীয়দের মতে, ছিকর তৈরির
সূচনা হয় হবিগঞ্জে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে সিলেটসহ আশপাশের জেলায়। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের দিকে ছিকর হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামে নিম্নবিত্ত সমাজে প্রচলিত এক বিশেষ খাবার ছিল। হাটে-বাজারে দেদার বিক্রি হতো এ পণ্য। বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এখনো তৈরি হয় শতভাগ মাটি দিয়ে বানানো এই বিস্কুট ‘ছিকর’। কিছু পরিবার ভালোবাসায় বাঁচিয়ে রেখেছেন এ প্রাচীন ঐতিহ্য। নবীগঞ্জ উপজেলার কায়স্থগ্রামের শব্দকর পাড়ায় এখনো প্রায় ১০টি পরিবার শখ ও ঐতিহ্যের টানে ছিকর তৈরি করছেন।
তারা জানান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীরা তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান ছিকর। বিস্কুট তৈরির কারিগররা জানান, বিশেষ ধরনের সাদা ও ঘন এঁটেল মাটি সংগ্রহ করা হয় পাহাড়ি টিলার তলদেশ থেকে। পাহাড়ের মিহি এঁটেল মাটিকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে আগুনে পোড়ানোর পর তৈরি হয় মাটির বিস্কুট। প্রথমে এ মাটি পানি দিয়ে রাতভর ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর কয়েক দফা ধুয়ে মাখানো হয়, যাতে হয় মসৃণ ও ব্যবহার উপযোগী। তার পর কাঠের ছাঁচে ফেলে চতুষ্কোণ আকারে তৈরি হয় বিস্কুটসদৃশ কাঁচা ছিকর। দুই দিন রোদে শুকানোর পর এগুলো মাটির পাতিলে করে নেওয়া হয় মাটির তৈরি চুলায়। ধানের তুষের ধোঁয়ার তাপে ঘণ্টাখানেক সেঁকা হয়, যা স্থানীয়ভাবে ‘দোয়ালি’ নামে পরিচিত। পোড়ানোর পর ছিকরের রং হয়ে যায় কালচে। ভেসে আসে মাটির ঘ্রাণমাখা বিশেষ সুবাস।